উন্নতির আশা আছে, বড় স্বপ্ন নেই মোহামেডান কোচের

মৌসুমের পর মৌসুম যায়, টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট শেষ হয়, কিন্তু মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের চাওয়ার সঙ্গে পাওয়ার সমীকরণ মেলে না! আসছে প্রিমিয়ার লিগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দলটি, কিন্তু মোহামেডান কোচ শন লেন এবারও দেখাচ্ছেন না বড় স্বপ্ন। ফুটবলারদের তাড়নার কথা অবশ্য বলছেন তিনি। তবে সীমাবদ্ধতা জানেন বলেই হয়তো তিনি লাগাম টানছেন আশায়।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 06:41 AM
Updated : 30 Jan 2022, 06:42 AM

২০২১-২২ মৌসুমের দলবদলের সময় শন লেন বলেছিলেন, একটা শিরোপা খুব করে চাই তাদের। সে চাওয়াটা কেবল মুখেই থেকে গেছে, মাঠের পারফরম্যান্সে প্রতিফলিত হয়নি। মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় তারা। ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটির কাছে হেরে।

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের নতুন আসর। ২০০৭ সালে প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর শুরুর প্রথম তিন আসরে রানার্স আপ হয়েছিল মোহামেডান। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, মোহামেডান একুট একটু করে পেছনেই পড়ে থেকেছে। শিরোপা জয় তো দূর অস্ত, কখনও কাছাকাছিও পারেনি। ২০১১-১২ ও ২০১৪-১৫ মৌসুমে তারা হয়েছিল তৃতীয়। ঘরোয়া ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী দলটি গত লিগ শেষ করে ষষ্ঠ স্থানে থেকে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে মোহামেডানের হাল ধরার পর প্রায় বছর তিনেক চলে গেছে, কিন্তু এখনও কোনো শিরোপার স্বাদ পাননি লেন। স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে সে লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার পর লিগ নিয়েও খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নন ৫৮ বছর বয়সী এই কোচ।

লিগ মাঠে গড়ানোর আগে অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, তরুণ ফরোয়ার্ড আমির হাকিম বাপ্পীর চোট লেনের দুর্ভাবনা বাড়িয়েছে কিছুটা।

“লিগ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি ভালো চলছে। স্থানীয় এবং বিদেশি সব খেলোয়াড় আছে প্রস্তুতিতে। শুধু মামুনুল ও বাপ্পী পুরোদমে অনুশীলন শুরু করেনি। মামুনুলের হ্যামস্ট্রিংয়ে হালকা চোট আছে, বাপ্পীর হাঁটুতে ছোটখাট একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। আশা করি, লিগ শুরুর আগে দুজন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।”

দেশি-বিদেশিদের নিয়ে নিজের স্কোয়াড নিয়ে অবশ্য বেশ সন্তুষ্ট মোহামেডান কোচ।

“সুলেমানে দিয়াবাতে (মালি), অ্যারন রিয়ারডন (অস্ট্রেলিয়া), ইয়াসমিন মেসিনোভিকি (মেসিডোনিয়া) ও ওবি মোনেকে (নাইজেরিয়া)- আমাদের দলে চমৎকার চারজন বিদেশি খেলোয়াড় আছে। চমৎকার সব স্থানীয় খেলোয়াড় আছে, যারা তরুণ এবং সবাই সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত।”

স্বাধীনতা কাপে চার বিদেশির মধ্যে শুধু মালির ফরোয়ার্ড দিয়াবাতেকে পুরোটা সময় পেয়েছিল মোহামেডান, কিন্তু বাকিদের অনুপস্থিতিতে প্রতিযোগিতাটির সবশেষ ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নরা পারেনি নিজেদের মেলে ধরতে। রিয়ারডন, মেসিনোভিকি ও মোনেকে যোগ দেওয়ায় ফেডারেশন কাপে দলটি উপহার দিয়েছিল লড়াকু ফুটবল।

মোহামেডানের আক্রমণভাগের মূল ভরসা দিয়াবাতে। গত লিগে ১৩ গোল করেছিলেন মালির এই ফরোয়ার্ড। স্থানীয়দের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। বাপ্পীর গোল ছিল ৪টি, জাফর ইকবালের ২টি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় লেল বললেন, এবারের লিগে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তরুণদের কাছ থেকে চান পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। মূলত তার চাওয়াটা মিডফিল্ডার অনিক হোসেন, জাফর, বাপ্পীদের মতো তরুণদের কাছেই।

“আমাদের দুর্বলতার জায়গা হচ্ছে, তরুণদের খেলায় ধারাবাহিকতার কিছুটা অভাব রয়েছে। অবশ্য তারা এখনও শেখার মধ্যে আছে। তরুণদের এই কমতি নিয়ে কাজ করা এবং এ দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।”

গত লিগে পাঁচ ম্যাচ হেরেছিল মোহামেডান। এর মধ্যে শিরোপা জয়ী বসুন্ধরা কিংস ও রানার্সআপ হওয়া শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কাছে দুই লেগেই হেরেছিল তারা। অন্য হারটি সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে  দুই লেগে করেছিল ড্র। পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল তারা উত্তর বারিধারা ও বাংলাদেশ পুলিশের মতো ‘নতুন’ দলের বিপক্ষেও।

সেখান থেকে এবার নাটকীয় উন্নতি করে ট্রফির পানে হাত বাড়ানোর কথা বলছেন  না লেন। বরং একটু একটু করে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে চান দল নিয়ে।

“আমাদের লক্ষ্য গত মৌসুমের চেয়ে ভালো অবস্থানে থেকে লিগ শেষ করা। গতবার আমরা লিগে ষষ্ঠ হয়েছিলাম; চতুর্থ স্থানে ওঠা থেকে আমরা মাত্র এক পয়েন্ট দূরে ছিলাম। এবার তাই আমাদের লক্ষ্য লিগ টেবিলের ওপরের দিকে ওঠা এবং উন্নতির ধারাবাহিকতায় থাকা।”

মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপে এবং এরপর ফেডারেশন কাপে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়াকে নিজেদের ব্যর্থতা মনে করেন না লেন। বিশেষ করে, ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার দায় তিনি দিচ্ছেন রেফারির উপর। রহমতগঞ্জের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধে মেসিডোনিয়ার ডিফেন্ডার মেসিনোভিকির দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করে লিগে রেফারিংয়ের মান উন্নয়নের দাবিও জানিয়ে রাখলেন এই ইংলিশ কোচ।

“গত দুই টুর্নামেন্টে আমাদের পারফরম্যান্ন নিম্নমানের ছিল, এটার সঙ্গে আমি একমত নই। স্বাধীনতা কাপে আমরা অধিকাংশ সময় একজন বিদেশি খেলোয়াড় পেয়েছিলাম। (পুরো শক্তির দল পাওয়ায়) ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছিলাম এবং রেফারির কিছু নিম্নমানের সিদ্ধান্ত আমাদের লুটে নিয়েছিল।”