‘বার্সেলোনার বিপক্ষে আরও গোল করতে পারতাম’

নকআউট পর্ব আগে নিশ্চিত হয়ে গেলেও বার্সেলোনার বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখ নামিয়েছিল পূর্ণ শক্তির দলই। প্রতিপক্ষের বাঁচা-মরার ম্যাচে তাদের গুঁড়িয়ে তুলে নেয় সহজ জয়। দলটির কোচ ইউলিয়ান নাগেলসমানের কণ্ঠে তারপরও যেন একটু অসন্তোষের ছোঁয়া। দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটি ভালো সুযোগ পেয়েও যে ব্যবধানটা আরও বড় করতে পারেনি তারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2021, 02:04 PM
Updated : 9 Dec 2021, 02:04 PM

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-০ গোলে জেতে বায়ার্ন। প্রথমার্ধে টমাস মুলার দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান লেরয় সানে। দ্বিতীয়ার্ধে অন্য গোলটি করেন জামাল মুসিয়ালা।

আসরে প্রথম দেখায়ও একই স্কোরলাইনে জিতেছিল বায়ার্ন। এই হারে দুই দশক পর শীর্ষ টুর্নামেন্ট থেকে ইউরোপা লিগে নেমে যাওয়ার তেতো অভিজ্ঞতা হলো বার্সেলোনার। 

গ্রুপে ছয় ম্যাচের সবকটি জেতা বায়ার্নের পয়েন্ট ১৮। ৮ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ বেনফিকা। তাদের চেয়ে এক পয়েন্ট নিয়ে তিনে বার্সেলোনা।

ম্যাচের পর নাগেলসমান ডিএজেডএনকে বলেন, তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর রক্ষণে একটু বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন তারা। সেটা না হলে বার্সেলোনার জালে আরও কয়েকবার বল পাঠাতে পারত জার্মান চ্যাম্পিয়নরা।

“আমরা এমন একটি দলের বিপক্ষে খেলেছি যাদের ঐতিহ্য আছে এবং আজ (বুধবার) তাদের জিততে হতো।”

“দ্বিতীয়ার্ধে স্পষ্টভাবে আমরা রক্ষণে বেশি মনোযোগ দিয়েছি এবং তাদেরকে পজেশন একটু বেশি রাখতে দিয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি যথাযথভাবে খেলতে পারতাম, তাহলে আমরা তিনটির চেয়ে আরও বেশি গোল করতে পারতাম।”

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বায়ার্ন। ২০১৯-২০ আসরেও এই সাফল্য পেয়েছিল তারা। সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল দলটি। তাদের মতো দুইবার গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জয়ের কীর্তি আছে আর কেবল রিয়াল মাদ্রিদের।

মৌসুমের শুরু থেকে ঘরোয়া লিগেও ছন্দে আছে বায়ার্ন। সেই সঙ্গে ইউরোপ সেরার মঞ্চেও ছুটছে তারা। ধারাবাহিক দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সে দলটিকে অনেকেই এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফেভারিট হিসেবে দেখছে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে নাগেলসমান এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপাতত ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার দিকেই নজর দিতে চান তারা।

“কোনো কোনো ম্যাচে ওই দিনের পারফরম্যান্স বা ভাগ্যের ছোঁয়া পার্থক্য গড়ে দেয়। (নকআউট পর্বে) আগে কোনো ভুল করলে সেটা শুধরে নেওয়ার সুযোগও পাওয়া যায় না অনেক সময়। নিঃসন্দেহে নকআউট পর্বে ওঠা সব দলই কোনো না কোনোভাবে ফেভারিট এবং তাদের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে। এর মধ্যে আমরাও আছি। আমরা গ্রুপ পর্বে খুব ভালো করেছি। (গ্রুপ সেরা হওয়াটা) আমাদের প্রাপ্য এবং আজ আমরা লক্ষ্যে স্থির ছিলাম এবং পরের রাউন্ডে পৌঁছেছি।”

“আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে চাই এবং আমাদের কেউ কেউ এটা বারবার জিততে চায়। আমাদের নকআউট পর্বে একই পারফরম্যান্স দেখাতে হবে এবং একই মান ধরে রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমার দল সেটা করতে সক্ষম। তবে মাঠে সেটা করে দেখানোই আসল। এখন আমরা (শেষ ষোলোতে) আমাদের প্রতিপক্ষ কে হয়, সেটা জানার অপেক্ষায় থাকব এবং তারপর আমরা ওই ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নেব, সেজন্য অবশ্য এখনও সময় আছে।”

প্রতিযোগিতাটির শেষ ষোলোর ড্র হবে আগামী সোমবার।

বার্সেলোনা এর আগে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ২০০০-০১ আসরে। সেবার গ্রুপ পর্বে এসি মিলান ও লিডস ইউনাইটেডের পেছনে থেকে তৃতীয় হয়ে উয়েফা কাপে (এখনকার ইউরোপা লিগ) নেমে গিয়েছিল কাতালান ক্লাবটি। আর ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতাটিতে তারা সবশেষ খেলেছে ২০০৩-০৪ আসরে।

লা লিগায়ও দলটি নেই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায়। ১৫ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে সাতে। মাঠের বাইরেও দলটির অবস্থা ভালো নয়। আর্থিক দৈন্যতার কারণে গ্রীষ্মের দলবদলে ছেড়ে দিতে হয় লিওনেল মেসিকে। ধারে আতলেতিকো মাদ্রিদে পাঠায় অঁতোয়ান গ্রিজমানকে। এছাড়াও ক্লাবটি ছেড়ে গেছেন আরও ককেজন খেলোয়াড়।

বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা থাকায় এবং নিয়মের বাধায় নতুন খেলোয়াড়ও কিনতে পারছে না তারা। নাগেলসমানের বিশ্বাস, মাঠে ও মাঠের বাইরে দুঃসময় কাটিয়ে শিগগিরই স্বরুপে ফিরবে বার্সেলোনা।

“আমার বিশ্বাস, ক্লাবটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তারা এখনও সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলোর একটি। আজ জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল এবং দুটি ম্যাচেই (বার্সেলোনার মাঠে ৩-০ গোলে জয়) আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি এবং জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল।”

"আমি মনে করি, বার্সেলোনা এমন একটি ক্লাব যেখানে অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও ভালো খেলোয়াড় আছে। শুধু শাভিই নয়, ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যরাও ক্লাবের জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে। ম্যাচের আগেই আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম যে, দিনের পর দিন ১০০ কোটি ইউরোর বেশি ঋণের বোঝা নিয়ে চলা সহজ না। সমস্যার সমাধানে তাদের অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে কিছু সময় লাগতে পারে।”