রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রোনালদোর ইতিহাস, ইউনাইটেডের দুর্দান্ত জয়

কিছুটা বিবর্ণ শুরুর পর দুর্ঘটনাবশত পিছিয়ে পড়ল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো তারা। বিরতির ঠিক আগে সমতায় ফেরার পর ৮০০ ছোঁয়া গোলে দলকে এগিয়ে নিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। পরক্ষণেই পাল্টা জবাব আর্সেনালের। তবে ইতিহাস গড়ার ম্যাচে পাদপ্রদীপের আলোটা নিজের ওপরই রাখলেন রোনালদো। আরেকটি গোল করে দলকে এনে দিলেন অসাধারণ এক জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 10:14 PM
Updated : 2 Dec 2021, 11:11 PM

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বৃহস্পতিবার রাতে প্রিমিয়ার লিগের নাটকীয়তায় ভরা লড়াইয়ে ৩-২ গোলে জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

ম্যাচের শুরুতে এমিলি স্মিথের গোলে আর্সেনাল এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা টানেন ইউনাইটেডের হয়ে শততম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামা ব্রুনো ফের্নান্দেস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রোনালদো স্বাগতিকদের এগিয়ে নেওয়ার পরপরই সমতা টানেন মার্টিন ওডেগোর। পরের পেনাল্টি গোলে ব্যবধান গড়ে দেন পর্তুগাল অধিনায়ক।

বল দখলে আর্সেনাল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে ছিল সমতা। সফরকারীদের ১৭ শটের আটটি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ইউনাইটেডের ১৪ শটের ১০টিই লক্ষ্যে।

লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়শূন্য থাকার পর জয়ের হাসি হাসল ইউনাইটেড। এই নিয়ে শেষ ৯ ম্যাচে পাঁচটি হার ও দুটি ড্রয়ের পাশে তাদের জয় মাত্র দুটি।

ম্যাচের প্রথম দুই মিনিটে পরপর তিনটি কর্নার আদায় করে নেওয়া আর্সেনাল প্রথমটিতেই এগিয়ে যেতে পারতো। তবে বেঞ্জামিন হোয়াইটের হেড গোলমুখে কোনোমতে পা বাড়িয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান র‌্যাশফোর্ড।

আক্রমণে চাপ ধরে রেখেই ত্রয়োদশ মিনিটে জালে বল পাঠায় আর্সেনাল। তবে বিতর্কিত গোলটির বাঁশি বাজতে লেগে যায় তিন মিনিট।

প্রতিপক্ষের একটি আক্রমনের মুহূর্তে দুর্ঘটনাবশত সতীর্থের পায়ের আঘাতে পড়ে যান ইউনাইটেড গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়া। ঠিক তার পরপরই বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের হাফ ভলিতে ফাঁকা জালে বল পাঠান এমিলি স্মিথ। ফ্রেদ ম্যাচ অফিসিয়ালের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেও খেলা বন্ধের বাঁশি বাজাতে দুই সেকেন্ড দেরি করে ফেলেন রেফারি। ততক্ষণে বল তো জালে!

তাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দে হেয়া পুনরায় পোস্টে দাঁড়ালেও পিছিয়ে পড়ে ইউনাইটেড। ভিএআরের সাহায্যে রেফারি গোলের বাঁশি বাজানোর পর তাকে ঘিরে ধরে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা। তবে নিয়মানুযায়ী তো সেটা গোলই।

ওল্ড ট্র্যফোর্ডে নিজেরা সবশেষ গোল করার পর এখানে এই নিয়ে ৯টি গোল খেল ইউনাইটেড, মাঝে করতে পারেনি একটিও। ১৯৬১ সালের নভেম্বরের পর ঘরের মাঠে লিগে পাল্টা গোল করা ছাড়া এটাই তাদের সবচেয়ে বেশি গোল হজমের রেকর্ড।

এভাবে গোল খেয়েই যেন কিছুটা তেতে ওঠে দলটি। কয়েকটি ভালো আক্রমণ করলেও নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না তারা। অবশেষে ৪৪তম মিনিটে পাসিং ফুটবলে গড়া আক্রমণে ফ্রেদের ছোট পাস পেয়ে ১০ গজ দূর থেকে প্রথম ছোঁয়ায় গোলটি করেন ফের্নান্দেস।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই দে হেয়ার কঠিন পরীক্ষা নেয় আর্সেনাল। তবে গাব্রিয়েলের হেড অসাধারণ রিফ্লেক্সে ঠেকিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক। ৮০ সেকেন্ড পর প্রতি-আক্রমণে একজনকে কাটিয়ে দুরূহ কোণ থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন রোনালদো।

এরপরই ৫২তম মিনিটে রোনালদোর ওই ইতিহাস গড়া গোল। ডান দিক থেকে মার্কাস র‌্যাশফোর্ডের পাস পেয়ে ১০ গজ দূর থেকে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি। পা রাখলেন ৮০০ ক্যারিয়ার গোলের চূড়ায়।

এ যাত্রায় পাল্টা জবাব দিতে অবশ্য মোটেও দেরি করেনি আর্সেনাল। গার্বিয়েল মার্তিনেল্লির বাড়ানো বল পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে ডান পায়ের শটে স্কোরলাইন ২-২ করেন ওডেগোর।

ইউনাইটেডের জয়সূচক গোলটি আসে ৭০তম মিনিটে। ইউনাইটেডের ফ্রেদকে ডি-বক্সে ওডেগোর ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন রোনালদো। শেষ পর্যন্ত সেটিই ব্যবধান গড়ে দেয়।

নির্ধারিত সময় শেষের দুই মিনিট আগে রোনালদোকে তুলে নেন কোচ মাইকেল ক্যারিক। এর ঠিক আগ মুহূর্তে তাকে দৌড়াতে গিয়ে কিছুটা অস্বচ্ছন্দ দেখা যায়। জয়ের নায়ককে শেষ কয়েক মিনিটে না পেলেও ইউনাইটেডের জন্য তা কোনো ভাবনার কারণ হয়নি।

১৪ ম্যাচে ছয় জয় ও ৩ ড্রয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে উঠেছে ইউনাইটেড। উলে গুনার সুলশার ছাঁটাই হওয়ার পর এতদিন দলটির কোচের দায়িত্বে ছিলেন ক্যারিক। শুক্রবার থেকে তার জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিবেন রালফ রাংনিক।

ম্যাচ শেষে ইউনাইটেডকে বিদায় জানান ক্যারিক। তিন ম্যাচে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে সুলশারের সহকারী হিসেবে ছিলেন ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দলটিতে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা এই ইংলিশ ফুটবলার।

শেষ তিন লিগ ম্যাচে আর্সেনালের এটি দ্বিতীয় হার। সাত জয় ও দুই ড্রয়ে  ২৩ পয়েন্ট বেশি নিয়ে পঞ্চম স্থানে তারা।

৩৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে চেলসি। ম্যানচেস্টার সিটি ৩২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ও লিভারপুল ৩১ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে। চার নম্বরে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের্ পয়েন্ট ২৪।