মালদ্বীপকে যে মন্ত্রে হারাল বাংলাদেশ

একরকম হঠাৎ করেই বাংলাদেশ দলের ভার ওঠে মারিও লেমোসের কাঁধে। সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও পাননি এই পর্তুগিজ কোচ। তবে তার হাত ধরেই ১৮ বছর পর মালদ্বীপকে হারাল লাল-সবুজেরা। ৩৫ বছর বয়সী এই কোচ তাই অনুভব করছেন বিশেষ আনন্দ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2021, 03:44 PM
Updated : 13 Nov 2021, 06:45 PM

শ্রীলঙ্কার প্রাইম মিনিস্টার মাহিন্দা রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক ট্রফিতে শনিবার ২-১ গোলে জিতে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে ভুলে যাওয়া জয়ের স্বাদ পেল দল।

অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকায় সপ্তাহখানেকের অনুশীলনেও পুরো দল পাননি লেমোস। শ্রীলঙ্কায় অতিবৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচ পিছিয়ে যাওয়াতেই মূলত পুরো দল নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারেন তিন দিন। এই অল্প সময়ে জামাল-জিকোদের মনে আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনে দেন লেমোস। বাফুফের পাঠানো ভিডিও বার্তায় এই পর্তুগিজ কোচ জানালেন এখন সময় জয় উদযাপনের।

“১৮ বছর ধরে যাদেরকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ, সেই মালদ্বীপকে সৌভাগ্যবশত আমরা হারাতে পেরেছি। অবশ্যই খুশি। তবে আমি মনে করি, এ অভিযানে এটা আমাদের জন্য একটা পদক্ষেপ। এমন একটা দলকে হারাতে পারা খুবই বিশেষ কিছু। এটাই ফুটবল…এবং আমরা এই জয় উদযাপন করব।”

“কখনও কখনও আমি খুব বেশি উপভোগ করতে পারি না, কিন্তু এই জয় আমাদের জন্য খুবই স্পেশাল। আমি আরও চাই। এমনকি সিশেলসের কাছে পয়েন্ট হারানোর পরও ছেলেদের বলেছিলাম, আমাদের এখনও সুযোগ আছে। তোমরা দাবার মতো চেকমেট এবং একটা ম্যাচ করে ভাব…ছেলেরা আজ সেভাবে ভাবতে পেরেছে।”

একটি করে জয় ও ড্রয়ে ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা জোরালো করেছে বাংলাদেশ। তবে এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাপ দলকে দেননি বলে জানালেন লেমোস। পরিস্থিতি যাই হোক, দলকে শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তাই দিয়েছিলেন ম্যাচের আগে।

“চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়ে ছেলেদের আমি কিছু বলিনি। মালদ্বীপ মানসম্পন্ন একটি দল। এ ম্যাচের আগে আমি ছেলেদের কোনো লক্ষ্য বেঁধে দেইনি। এটা অনেক সময় চাপ তৈরি করে। সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে কথা বলছে…কিন্তু ছেলেদের বলেছি এটা নিয়ে তোমাদের ভাবার দরকার নেই। মালদ্বীপ ম্যাচ নিয়ে ভাব। ওদের বিপক্ষে প্রথমার্ধে আমরা একটা ভুল করেছি, ওরা শাস্তি দিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা সেটা করিনি, একটা দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম এবং সে কারণে ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ শেষ করলাম।”

“দ্বিতীয়ার্ধে স্কোরলাইন ২-১ হওয়াটা আমাদের জন্য অবশ্যই টার্নি পয়েন্ট। এ অর্ধে আমাদের ভুগতে হয়েছে। আসলে মালদ্বীপের মতো দলের বিপক্ষে খেলতে নামলে ভুগতে হবে। তবে ছেলেদের প্রতি বার্তা ছিল, বল পজেশনে পিছিয়ে থাকলেও ভীত হওয়া যাবে না। পজেশনে ওরা এগিয়ে থাকবে, সুইচ করবে, কিন্তু আমাদের শেপটা ধরে রাখতে হবে এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। আমি মনে করি দ্বিতীয়ার্ধে তারা কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। ছেলেদের বলেছিলাম তোমরা দুই-তিনটা সুযোগ পেতে পার এবং অবশ্যই তোমাদের সেটা কাজে লাগাতে হবে। ছেলেরা দুটি কাজে লাগাতে পেরেছে।”

প্রতিযোগিতার চার দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে মালদ্বীপ (১৫৬তম)। তাদের বিপক্ষে সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দেখায় ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানের চোখ রাঙানি থাকলেও লেমোস জানালেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই শক্তিশালী দলটির বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস ঠিকই ছিল তার।

“আমার কোচিংয়ে আবাহনী এএফসি কাপের জোনাল সেমি-ফাইনালে খেলেছে। এখানে মালদ্বীপকে হারাল বাংলাদেশ। আসলে আমি প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য নামি এবং মনে করি, প্রতিটি ম্যাচই জিততে পারি। কিন্তু ফুটবলে কখনও কখনও সেটা হয় না। কিন্তু এটাই আমার বিশ্বাস (আমি জিততে পারি)। এই বিশ্বাসই আমাকে এখানে (বাংলাদেশ কোচ) নিয়ে এসেছে। আমার মনে হয়, মালদ্বীপের বিপক্ষে আমরা নিখুঁতভাবে কাজগুলো করতে পেরেছি।”