আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে: জামাল

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যর্থতা পিছু ছাড়েনি এখনও। শ্রীলঙ্কায় চার জাতি টুর্নামেন্ট সামনে রেখে অনুশীলনের পর যথারীতি সাফ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন জামাল ভূইয়া। শুধু মুখের কথা আর প্রতিশ্রুতি দেওয়া নয়, কিছু একটা করে দেখানোর তাড়না অনুভব করার কথা বললেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। লক্ষ্য পূরণে দলকে ‘গড়পড়তা’র পর্যায়ে থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2021, 01:42 PM
Updated : 2 Nov 2021, 01:42 PM

শ্রীলঙ্কায় প্রাইম মিনিস্টার মাহিন্দা রাজাপাকসে ট্রফিতে আগামী ৮ নভেম্বর সিশেলসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। ১১ নভেম্বর মুখোমুখি হবে মালদ্বীপের। তিন দিন পর প্রতিপক্ষ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে পঞ্চম দিনের অনুশীলন সেরেছে দল।

পারিবারিক ব্যস্ততা শেষ করে ডেনমার্ক থেকে ঢাকায় ফিরে এদিন দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলন করলেন জামাল। পরে ব্যর্থ সাফ মিশন, দলের ঘাটতি, নতুন কোচ আসা, শ্রীলঙ্কা সফরের লক্ষ্য নিয়ে তুলে ধরলেন নিজের ভাবনা।

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে, ভারতের বিপক্ষে ড্র করে ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনালে খেলার স্বপ উঁকি দিয়েছিল। মালদ্বীপের বিপক্ষে হারে আর নেপালের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ড্র করে তা গুঁড়িয়ে যায়। মালদ্বীপের আসরে আক্রমণাত্মক খেললেও সেট পিস ছাড়া গোল পায়নি দল। সামর্থ্যের ঘাটতি নিয়ে অকপট স্বীকারোক্তি দিলেন জামাল।

“যদি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে দেখেন, যে গোল আমরা করেছি, তা সেট পিস থেকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তপু বর্মন গোল করেছে পেনাল্টি থেকে। ভারতের বিপক্ষে আমার কর্নার থেকে গোল করেছে ইয়াসিন আরাফাত। নেপালের বিপক্ষে আমার ফ্রি কিকে সুমন রেজা গোল করছে। ওপেন প্লেতে আমরা গোল করি না, এটা একটা বিশাল বড় ঘাটতি।”

“ওপেন প্লেতে গোল করতে পারলে খেলোয়াড়রা আরও রিল্যাক্স অনুভব করে, কিন্তু আমরা নির্ভর করি পেনাল্টি বা সেট পিসের ওপর। তাই আমাদের অবশ্যই সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে হবে। যদি নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দেখেন, আমরা দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েছিলাম, সুমন দারুণ সুযোগ পেয়েছিল, অন্যরাও পেয়েছিল, ওপেন প্লে থেকে আমরা গোল পেতে পারতাম কিন্তু সেটা হয়নি…..কারণ ঘাটতি।”

নেপালের বিপক্ষে ড্রয়ের রাতে ড্রেসিংরুমের আবহও কেমন ছিল জানালেন জামাল। তবে শ্রীলঙ্কার টুর্নামেন্ট দিয়ে সাফল্যের পথে ফিরতে আশাবাদী অধিনায়ক। লক্ষ্য পূরণে নিজ দলের ওপর আস্থা রাখছেন তিনি।

“আসলে সাফ শেষের পর সবাই হতাশ ছিল। নেপাল ম্যাচের পর আমরা আলোচনা করেছি। অধিকাংশই কান্নাকাটি করেছে। ফুটবল এরকমই, জয় আসবে, হারতে হবে এবং এরপর আমাদেরকে পরের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের সে লক্ষ্য পরের টুর্নামেন্ট জেতা। যে দল আছে, আমি মনে করি, আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী দল। অবশ্যই মালদ্বীপ আছে সেখানে, কিন্তু আমি মনে করি, মালদ্বীপের চেয়ে মালদ্বীপের লিগ অনেক ভালো…. শ্রীলঙ্কায় সাফল্য পাওয়ার ভালো সুযোগ আছে আমাদের।”

“অনেক খেলোয়াড় এখানে নেই, কিন্তু নতুনরা এসেছে, নতুন কোচকে, গণমাধ্যমকে তারা দেখাতে চাইবে তারা জাতীয় দলে থাকতে চায়। সবসময় জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারাটা দারুণ অর্জনের। এটা আমার এবং দলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে। কেননা, সবাই চ্যাম্পিয়নকে চায়, সবাই জিততে চাই।”

শ্রীলঙ্কাকে যথেষ্ট সমীহ করলেও নিজেদের ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এই মিডফিল্ডার।

“শ্রীলঙ্কা অনেক উন্নতি করেছে। তিন চার বিদেশি খেরোয়াড় এনেছে। নেপালের বিপক্ষে ভালো করেছে, ভারতের বিপক্ষে ড্র করেছে। তবে আমি মনে করি, আমার দল আরও ভালো করবে।”

কেবল আক্রমণভাগে নয়, সব বিভাগেই উন্নতির জায়গা দেখছেন জামাল। মানের দিক থেকে ‘গড়পড়তা’র পর্যায় থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানও জানালেন তিনি। ফরোয়ার্ডদের সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদ দিলেন সবচেয়ে বেশি।

“আসলে যারা আছে, তারা সবসময় চেষ্টা করছে। তবে অবশ্যই আমাদের কিছু কমতি আছে। যে দিকগুলোতে আরও ভালো করতে হবে। আমি বলছি না, আমরা খারাপ দল কিংবা দারুণ দল, কিন্তু আমাদের গড়পড়তার চেয়ে ভালো দল হতে হবে।”

সাফে বাংলাদেশ খেলেছে অস্কার ব্রুসনের কোচিংয়ে। শ্রীলঙ্কায় খেলবে নতুন কোচ মারিও লেমোসের কোচিংয়ে। বল পায়ে রাখার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন এই পর্তুগিজ কোচ। তবে জামালের মনে হচ্ছে, বল পজেশনের চেয়ে সুযোগ কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ।  

“বলের নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু দেখুন, ভারতের বিপক্ষে আমরা বল পজেশনে পিছিয়ে ছিলাম, অথচ আমরা বেশি সুযোগ তৈরি করেছিলাম। তাই আমি মনে করি না, বল পজেশনে….আমাদেরকে সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং যে কোনোভাবে তা কাজে লাগাতে হবে, আমাদের আসলে গোল করতে হবে।”

“যারা মাঝমাঠে খেলে, অবশ্যই তাদের বল পায়ে রাখতে হবে কিন্তু (আমাদের মাঝমাঠে) দুজন খেলে, তাই এটা শুধু মিডফিল্ডারদের দায়িত্ব নয়, সবাইকে কাজ করতে হবে। অবশ্যই মাঝমাঠ এর একটা অংশ কিন্তু বাকিরাও দলের অংশ, তাদেরকেও এর সঙ্গে যোগ দিতে হবে।”

বারবার কোচ বদল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জামাল অবশ্য কৌশলী উত্তরই দিয়েছেন এ প্রসঙ্গে।

“একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমাকেই মানিয়ে নিতে হবে। মানিয়ে নিতে না পারলে সমস্যা। আসলে এই সিদ্ধান্তগুলো আমরা নিই না। ফেডারেশন নেয়। ম্যানেজমেন্ট যে সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনুযায়ী খেলোয়াড়দের চলতে হয়।”