প্রাথমিক দলে ঠাঁই পাওয়া ২৭ জনের ১০ জনই বসুন্ধরা কিংসের, বাকি ১৭ জন অন্য দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশ দলের অন্তর্বর্তীকালী কোচ হওয়ার আগে কিংসের দায়িত্বেই ছিলেন ব্রুসন। তাই কিংসের ১০ জন আগে থেকেই কোচের কৌশলের সঙ্গে পরিচিত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্রুসনের ‘নতুন শিষ্যরাও’ জানালেন নিজেদের ভাবনা।
আগামী ১ অক্টোবর মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে শুরু হবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ত্রয়োদশ আসর। এ উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার রওনা দেবে দল।
গত লিগে দেশি ফরোয়ার্ডদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ গোল করা জুয়েল এ পর্যন্ত জাতীয় দলে জেমি ডে, অ্যান্ড্রু অর্ড, টম সেইন্টফিট, ফাবিও লোপেজ, লোডভিক ডি ক্রুইফ ও গনসালো সানচেস মোরেনো-ছয় বিদেশি কোচের অধীনে খেলেছেন। এই বিদেশিদের সঙ্গে ব্রুসনের পরিকল্পনা তার কাছ ‘সহজ ও কার্যকরী’ মনে হচ্ছে।
“সবশেষ জেমির অধীনে খেলেছি। তিনি লং পাসে, প্রতি-আক্রমণভিত্তিক খেলার চেষ্টা করতেন। ব্রুসন চেষ্টা করছেন পাসিং ফুটবল খেলে আক্রমণে ওঠার। একটু সেভ জোনে থেকে নিজেদের মধ্যে পাসিং ফুটবল খেলে সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।”
“এ বিষয়টা আমাদের কাছেও সহজ মনে হচ্ছে। কেননা, বল বেশি সময় পায়ে রাখতে পারলে খেলোয়াড়দের ভালো লাগে। আত্মবিশ্বাস জন্মে। আক্রমণের সময় ও রক্ষণের সময় দলীয় প্রচেষ্টা যেন থাকে-এই দিকগুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমি যেমন আবাহনীর হয়ে লেফট-রাইট দুই উইংয়ে খেলি; ব্রুসন রাইট উইং পজিশনে অনুশীলন করাচ্ছেন।”
“ব্রুসন চায় আমরা যেন পায়ে বল রেখে খেলি। প্রতিপক্ষকে যেন ভালোভাবে বুঝে নিয়ে প্রেসিং করি, আক্রমণে উঠি। উনি সবথেকে বেশি পাসিংয়ে মনোযোগ দেন। ‘কিপ দ্য বল’-এটাই তার মূল বার্তা। উনি সবসময় নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি পাস দেওয়া নেওয়া করতে বলেন, পায়ে বল রাখতে বলেন। বল পায়ে থাকলে কিন্তু খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।”
“জেমির অধীনে আমরা লং পাসে বেশি খেলতাম। এখন ছোট ছোট পাসে খেলার অনুশীলন করছি। সবসময় যে সৃষ্টিশীল পাস বা কার্যকরী পাস দিতে হবে, ব্রুসন কিন্তু এটা বলছেন না। তিনি বেসিক পাসিং ফুটবলে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তো এই মৌলিক বিষয়ে যদি কেউ মানিয়ে নিতে না পারে, তাহলে তো হবে না।”
“দেখুন, সবসময় যদি আমরা ডিফেন্স করি, আক্রমণ ফেরাতেই ব্যস্ত থাকি, তাহলে কিন্তু হবে না। আর এভাবে ৯০ মিনিট খেলাও যায় না। আমাদেরও আক্রমণ করতে হবে। এজন্য পাসিং ফুটবল খেলতে হবে। ব্রুসনের কথা-সামনে যদি কোনো সতীর্থ না থাকে, তাহলে পেছনে পাস দাও, যেখানে জায়গা ফাঁকা আছে, সেখানে দাও। এই বেসিক বিষয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনো কষ্ট হচ্ছে না।”
মোটা দাগে স্প্যানিশ ফুটবলের ‘তিকি-তাকা’র ছোঁয়া জাতীয় দলে আনতে চাইছেন ব্রুসন। উত্তর বারিধারার ফরোয়ার্ড সুমনও জানালেন ব্রুসনের কৌশলে গুরুত্ব পাচ্ছে বল বেশি পায়ে রাখা, বল হারালে দ্রুত তা পুনরুদ্ধার করা, নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণে ওঠা। ২৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের মতে কৌশল বদল হলেও কোনো কিছুই ফুটবলের বাইরে না।
“প্রথমত, সে চেষ্টা করছে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে। আমরা জিততে পারি-এই মানসিকতা আমাদের মধ্যে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। চাইলে আমরাও পাসিং ফুটবল খেলতে পারব, আক্রমণে উঠতে পারব, বিল্ড আপ ফুটবল খেলতে পারব-এই বিশ্বাসগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যেখানে বল হারাব, সেখানেই যেন আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেস্তে দিতে পারি, সে চেষ্টা করার কথা বলেছেন।”
“নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে তারপর কুইক টাচে আক্রমণে ওঠার কৌশলও আমাদের শেখাচ্ছেন। মানে, আমরা যেন তাড়াহুড়ো না করে, দেখে-শুনে খেলাটা খেলি, এই চেষ্টা করছেন তিনি। আমরাও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
ব্রুসনের কৌশলের সঙ্গে দল কতটা মানিয়ে নিতে পারল, এ প্রশ্নের উত্তর মেলানোর শুরু হবে ১ অক্টোবর থেকে। সাফের উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশর প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির এবারের আসরে ৪ অক্টোবর ভারত, ৭ অক্টোবর মালদ্বীপ এবং ১৩ অক্টোবর নেপালের মুখোমুখি হবে ব্রুসনের দল।
ফাইনাল ১৬ অক্টোবর, যে ফাইনালের মঞ্চে ২০০৫ সালের পর কখনোই ওঠা হয়নি বাংলাদেশের।