রোমে আজ্জুরিদের জন্য শুক্রবারের রাতটি যেন এর চেয়ে সুন্দর হতে পারত না। যে রাত ছিল তাদের অতীত-বর্তমানের সেরা পারফরম্যান্সের দারুণ মেলবন্ধন। তুরস্ককে ৩-০ গোলে হারায় দলটি। গড়ে ইউরোর ইতিহাসে উদ্বোধনী ম্যাচে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের কীর্তি।
খুব কম লোকেই রবের্তো মানচিনির দলটিকে এবারের ইউরোর শেষ পর্যন্ত যাওয়ার বিচারে ফেভারিটের তালিকায় রেখেছিল। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন আক্রমণাত্মক ফুটবল এবং জমাট রক্ষণের পসরা মেলল দলটি। ইউরোর মূল পর্বে প্রথমবারের মতো কোনো ম্যাচে গোল পেল তিনটি। এখানে একটা পরিসংখ্যান বলে রাখা যায়, এ পর্যন্ত তিনবার ইউরোর ফাইনালে উঠেছে ইতালি; শিরোপা জয়ের হাসি হেসেছে মাত্র একবার। সেই ১৯৬৮ সালে।
কিন্তু তুরস্কের বিপক্ষে আলো ঝলমলে পারফরম্যান্সে ইতালি এক ঝটকায় উঠে এসেছে পাদপ্রদীপের আলোয়। বোদ্ধাদের আলোচনার টেবিলেও। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরার যেমন চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পারফরম্যান্স নিয়ে বললেন, “তারা সবাইকে ছোট একটা বার্তা দিয়েছে।”
মানচিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলটির খোলনলচে পাল্টে যেতে থাকে। এই ইতালিয়ান কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুর পাঁচ ম্যাচের দুটিতে হেরেছিল তারা। এরপর ম্যানচেস্টার সিটির এই সাবেক কোচের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। তুরস্ক ম্যাচ দিয়ে এ নিয়ে টানা ২৮ ম্যাচ অজেয় ইতালি। এর মধ্যে জয় শেষ ৯টিতে এবং সবগুলো ম্যাচেই তারা মাঠ ছেড়েছে কোনো গোল হজম না করে!
ইউরোয় দাপুটে শুরু করা ইতালির পারফরম্যান্সে ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক ডিফেন্ডার মিকাহ রিচার্ডসও মুগ্ধ। বিবিসি রেডিও-৫ লাইভে প্রশংসা করলেন মানচিনি ও তার দলকে।
“লোকে উড়তে চাইবে, আপনিও চাইবেন প্রথম ম্যাচটা দারুণ হোক এবং আমরা সেটা দেখলাম।”
“শুধু খেলোয়াড়রা নয়, ছেলেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনে দেওয়ায় কোচও অনেক কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য।”
বিবিসি ওয়ানের সঙ্গে আলাপচারিতায় শিয়েরার ফিরে গেলেন মানচিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময়টাতে।
“যখন মানচিনি দায়িত্ব নিয়েছিল, ইতালি অবস্থা ছিল জগাখিচুড়ির মতো। তিনি খেলার ধরন বদলালেন। শুধু বল পায়ে নয়, বল ছাড়াও তারা সবকিছুতেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।”
বড় কোনো প্রতিযোগিতায় ইতালি এর আগে স্বাগতিক ছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপের। সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বখ্যাত বাদক আন্দ্রেয়া বোসেল্লি স্তাদিও অলিম্পিকোর আঙিনায় ১৬ হাজার দর্শকের সামনে বাজিয়েছিলেন নেস্সুন দোরমা (কাউকে ঘুমাতে দেব না)। সেই মুহূর্তগুলো স্তাদিও অলিম্পিকোয় ১৬ হাজার দর্শকের সামনে আবারও ফিরিয়ে আনল মানচিনির দল।
শুরুর প্রাপ্তিতে দারুণ খুশি মানচিনিও, “রোমে ভালো শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি মনে করি, এটা মানুষের এবং ইতালির সমর্থকদের জন্য তৃপ্তিদায়ক। আমরা দর্শকের অনেক সমর্থনও পেয়েছি।”
“এটা চমৎকার একটা সন্ধ্যা ছিল এবং আশা করি এমন সন্ধ্যা আরও অনেক আসবে। ওয়েম্বলি? এখনও অনেক পথ বাকি। ছয় ম্যাচ বাকি।”
ইলমাজকে রুখে দিয়ে কিয়েল্লিনির মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুঁড়ে উদযাপন দেখে সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিন্যান্ডের মনে হচ্ছে, এখন ইতালিকে নিয়ে বাকিদের ভাবতে হবে।
“ইতালির বিপক্ষে খেললে অবশ্যই আপনাকে পারফরম করতে হবে। কৌশলগত একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এগিয়ে তারা এই জায়গাটা তৈরি করেছে এবং এটা তাদের জন্য বেশ কার্যকর।”
স্পেনের সাবেক মিডফিল্ডার সেস ফাব্রেগাসের মনে ধরেছে ইতালি দলের মধ্যে বয়ে চলা ঐক্যের তান, “ম্যাচের শেষে আপনি দেখতে পাবেন, তারা ঐক্যবদ্ধ এবং এটা আপনি অনুভব করবেন। তারা বন্ধু এবং খেলে পরস্পরের জন্য।”
তুরস্কের বিপক্ষে ম্যাচে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইম্মোবিলে-ইনসিনিয়েরা ‘কাউকে ঘুমাতে দেব না’ এই বার্তাই যেন দিয়ে গেলেন।