বয়স পেরিয়ে গেছে ৩৬। যদিও তা কম সময়ই বুঝতে দেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম, ফিটনেস সচেতনতা, হার না মানা মানসিকতা আর প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়না মিলিয়ে এখনও তিনি বুনো। সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেরাদের একজন। তবু, কিছু ছাপ তো পড়েই!
তাই কমে আসছে গতি আর দম। চোটেও আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজের সম্ভাব্য শেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে আরেকবার বিশেষ কিছু অর্জনের বাড়তি তাগিদ থাকারই কথা পাঁচবারের ব্যালন ডি অর জয়ী তারকার।
পাঁচ বছর আগে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে প্রথমার্ধে চোট নিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন পর্তুগাল অধিনায়ক। তবে মাঠ ছাড়লেও সতীর্থদের ছাড়েননি। বাকি সময়ের পুরোটাই টাচলাইনে দাঁড়িয়ে তিনি ছিলেন দলের প্রাণশক্তির উৎস। পরে বিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্রে সতীর্থ নানি বলেছিলেন, “সে সবার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছিল। রোনালদোকে এড়িয়ে যাওয়াটা অসম্ভব। আমার মনে হয় সেদিন সবাই টাচলাইনে তার উপস্থিতি অনুভব করেছিল।”
২০০৪ ইউরোতে দেশের মাঠে গ্রিসের বিপক্ষে ফাইনালে পরাজয়ের পর রোনালদোকে আরও ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয় পর্তুগালের হয়ে ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের জন্য।
আগামী ১১ জুলাই ওয়েম্বলির ফাইনালে যদি শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন রোনালদো, দুটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী মাত্র দ্বিতীয় অধিনায়ক হবেন তিনি। এখনও পর্যন্ত এই কীর্তি আছে কেবল স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি ইকের কাসিয়াসের।
শুধু তাই নয়, রোনালদোর সামনে এবার হাতছানি আরও বেশ কিছু অর্জন ও মাইলফলকের।
এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন রোনালদো। বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি,৩১ গোল নিয়ে। এবারের আসরে কেবল একটি গোল করলে মূল আসরেও সর্বাধিক গোলের মালিক হবেন তিনি।
চার আসর মিলিয়ে ২১ ম্যাচে রোনালদোর গোল করেছেন ৯ টি। ২০০৪ সালে নিজের প্রথম ইউরোতে ২টি, ২০০৮ আসরে ১টি, ২০১২ এবং ২০১৬ আসরে করেন ৩ টি করে। চারটি ভিন্ন ইউরোতে গোল করা একমাত্র ফুটবলার তিনি।
ফ্রান্স কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনির গোলও ৯টি। তবে সেটি ছিল এক আসরেই, ১৯৮৪ সালে ৫ ম্যাচে।
একাধিক আসরে অন্তত ৩ গোল করার একমাত্র কীর্তি রোনালদোরই।
গোল করার ধরনেও তিনি গড়েছেন রেকর্ড। ৯টি গোলই করেছেন পেনাল্টি বক্সের মধ্য থেকে, এর মধ্যে ৫টি এসেছে হেডের মাধ্যমে। দুটিই রেকর্ড।
গ্রুপ পর্যায়ে করেছেন তিনি সর্বাধিক ৬ টি গোল।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে দুটি ফাইনাল খেলা ৪৪ খেলোয়াড়ের একজন রোনালদো। তিনটি ফাইনাল খেলতে পারেননি কেউ। এবার সুযোগ তার।
চার আসর মিলিয়ে ১১ ম্যাচের জয়ের স্বাদ পেয়েছেন রোনালদো। ইউরোতে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডে যৌথভাবে তার সঙ্গী স্পেনের সেস ফাব্রেগাস ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এবার একটি জয় পেলেই রেকর্ড হবে শুধু রোনালদোর।
একটি রেকর্ড তার হয়ে যাবে মাঠে নামলেই। প্রথম ফুটবলার হিসেবে খেলবেন পাঁচটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে।
২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মূল আসরে রোনালদো খেলেছেন ২১টি ম্যাচ। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সেই রেকর্ড সংহত হবে আরও।
গোলের জন্য এখন পর্যন্ত রোনালদো শট নিয়েছেন ১২২টি। ১৯৮০ সাল থেকে গোলে শট নেওয়ার রেকর্ড সংরক্ষণের পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ। ৫২ শট নিয়ে তার অনেক পেছনে সাবেক ফ্রান্স তারকা থিয়েরি অঁরি।
লক্ষ্যে শট নেওয়ার ক্ষেত্রেও সবার চেয়ে এগিয়ে রোনালদো। ৩২ বার লক্ষ্যে শট নিয়েছেন তিনি। দুইয়ে থাকা অঁরি, ডেনিস বার্গকাম্প যৌথভাবে শট নিয়েছেন ২০টি করে। ২০১৬ সালে এক আসরেই ১৭ টি শট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন গ্যারেথ বেল।
২১ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ৮৩ বার ড্রিবলের চেষ্টা করেছেন তিনি, এখানে তার অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছেন সাবেক সতীর্থ লুই ফিগো। তবে সফলভাবে ৩১টি ড্রিবল সম্পন্ন করার তালিকায় রোনালদোর অবস্থান একটু পেছনে, সাতে।
আরেকটি বড় রেকর্ড রোনালদোকে হাতছানি দিচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকেই। ইউরোর সীমানা ছাড়ানো কীর্তি হবে যেটি, হতে পারে এই আসরেই। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়তে তার দরকার আর মাত্র ছয়টি গোল। ১০৪ গোল করে বর্তমানে তিনি দুইয়ে। প্রথমে আছেন ইরানের আলি দাই। তার গোলসংখ্যা ১০৯ টি।