রোনাল্ড কুমান বার্সেলোনার দায়িত্বে আসার পরই কাম্প নউয়ে সুয়ারেসের ভবিষ্যৎ পড়ে যায় অনিশ্চয়তায়। উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড খুব করে চেয়েছিলেন প্রিয় আঙিনায় থেকে যেতে। প্রয়োজনে বদলি হিসেবে খেলতেও ছিলেন রাজি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কুমানের পরিকল্পনায় জায়গা মেলেনি। ৬০ লাখ ইউরোয় গত বছর পাড়ি জমান আতলেতিকোয়।
সদ্য শেষ হওয়া লিগে চ্যাম্পিয়নদের সর্বোচ্চ গোলদাতা (২১টি) সুয়ারেস। রিয়াল ভাইয়াদলিদের বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা শেষ ম্যাচেও পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই খেলোয়াড়। গত সপ্তাহে ওসাসুনার বিপক্ষে জয়ে ৮৮তম মিনিটেও লক্ষ্যভেদ করেছিলেন তিনি।
আরেক নায়ক ইয়োরেন্তে শৈশবের প্রিয় ক্লাব রিয়াল ছেড়ে আতলেতিকোয় নোঙর ফেলেন ২০১৯ সালের জুনে। দিয়েগো সিমেওনের দলে তার শুরুটা ছিল ধীরলয়ে। কিন্তু যখন হোল্ডিং মিডফিল্ডার থেকে বিস্ফোরক উইঙ্গার বনে গেলেন, তখন থেকেই নিয়মিত তিনি।
“এই মৌসুমে ভীষণ ভুগতে হয়েছে, কিন্তু এখন সময় উদযাপনের।”
লিগে আতলেতিকোর করা ৬৭ গোলের প্রায় অর্ধেকই এনে দিয়েছেন সুয়ারেস ও ইয়োরেন্তে। ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো দলটির লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে যাদের অবদান অনেক।
রিয়ালের সঙ্গে ইয়োরেন্তের বলতে গেলে ‘পারিবারিক সম্পর্ক’ ! তার চাচা পাকো গেন্তো রিয়ালের ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন। তার বাবা এবং দাদাও খেলেছেন ক্লাবটিতে।
লিগের শেষ রাউন্ড পর্যন্ত আতলেতিকোর ঘাড়ে শ্বাস ফেলেছে রিয়াল। জয় দিয়ে লিগও শেষ করেছে তারা। কিন্তু ২ পয়েন্টের দূরত্ব ঘোচাতে পারেনি জিনেদিন জিদানের দল। ইয়োরেন্তের মতো মেধাবী খেলোয়াড় ছেড়ে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকোয় যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এখন হয়ত মাথা কুটবে তারা।
এটাও ঠিক যে ইয়োরেন্তেকে ছেড়ে দিয়ে চার কোটি ইউরো পকেটে পুরেছিল রিয়াল। হোল্ডিং মিডফিল্ডে কাসেমিরোর মতো দারুণ নির্ভরতাও ছিল তাদের।
তবে বার্সেলোনা যেভাবে সুয়ারেসকে বিদায় করেছিল, তার জন্য দলটি হয়তো দুঃখ পাচ্ছে। রীতিমতো জোর জবরদস্তি করে গত গ্রীষ্মে উরুগুয়ের এই ফরোয়ার্ডকে কাম্প নউ থেকে বিদায় করেছিল তারা। বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড়দের বিদায় করার সেই মিছিলে সুয়ারেস ছাড়াও ছিলেন আর্তুরো ভিদাল এবং ইভান রাকিতিচ।
সুয়ারেসের চলে যাওয়াটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারেননি লিওনেল মেসি। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সমালোচনায় কাজ হয়নি; ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাম্প নউ থেকে বিদায় আটকাতে পারেননি বার্সেলোনা অধিনায়ক।
অথচ ১৯৮ গোল নিয়ে বার্সেলোনার ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সুয়ারেস। দলটির হয়ে চারটি লিগ শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। বার্সেলোনার কাছ থেকে পাওয়া ‘আঘাত’ ভুলতে পারেননি সুয়ারেস। আতলেতিকোর হয়ে শিরোপা জয়ের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন।
“তখন যেভাবে আমাকে ভুগতে হয়েছে…এই কারণে শিরোপাটি আমার জন্য খুবই স্পেশাল। আমার পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে আমি সাত বছরে পাঁচটি লিগ শিরোপা জিতেছি।”
সুয়ারেসের প্রশংসায় স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চমুখ হয়েছেন সিমেওনে। সাফল্যের জন্য উরুগুয়ের ফরোয়ার্ডের ক্ষুধার তীব্রতা বোঝাতে টেনেছেন অদ্ভূত উপমাও।
“সুয়ারেস একটা লড়াকু দানব, জন্মগতভাবে একজন গোলদাতা।”
“সে বেপরোয়া...অসাধারণ ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে এসেছিল। কিন্তু সে বলেছিল, ‘আমি শীর্ষ পর্যায়ে খেলা চালিয়ে যেতে চাই’, এবং আতলেতিকোয় যোগ দিয়েছিল। আতলেতিকো ফুটবল নিয়েই বাঁচে, যেমনটা বাঁচে সুয়ারেসও।”