হয় সুপার লিগে নয়তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, উয়েফার হুমকি

প্রস্তাবিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে এখনও হাল ছাড়েনি শুরুর উদ্যোক্তাদের মধ্যে চার দল রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ইউভেন্তুস ও এসি মিলান। ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা উয়েফা তাই মাঝে সুর নরম করলেও ফের কড়া বার্তা দিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান আলেকসান্দার চেফেরিন আবারও পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, সুপার লিগে খেলা দলগুলোর জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুয়ার বন্ধ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2021, 12:18 PM
Updated : 24 April 2021, 12:18 PM

অনেক বছরের গুঞ্জন সত্যি করে ইউরোপের ১২টি ধনী দল মিলে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় গত রোববার। ৭২ ঘণ্টা না যেতেই তীব্র সমালোচনা ও সমর্থকদের চাপের মুখে একে একে সরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের ছয় দল ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি ও টটেনহ্যাম হটস্পার, স্পেনের আতলেতিকো মাদ্রিদ এবং ইতালির ইন্টার মিলান।

এরপর অনেকে ‘বিদ্রোহী’ লিগটির শেষ দেখে ফেললেও প্রকল্পটির প্রথম চেয়ারম্যান রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস এখনও আশাবাদী। একই সুর স্পেনের আরেক দল বার্সেলোনাও। ইতালির দুই দল ইউভেন্তুস ও এসি মিলান সুর নরম করলেও এখনও তারা সরে দাঁড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।

শুরু থেকেই বিচ্ছিন্ন এই প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে উয়েফা ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। চেফেরিনের কথায় আবারও সেটিই স্পষ্ট হলো।

যে দলগুলো ভুল বুঝতে পেরে সরে দাঁড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে উয়েফা কোনো ব্যবস্থা নেবে না বলে আভাস দিয়েছেন চেফেরিন। তবে শুক্রবার বার্তা সংস্থা এপিকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাকি চার দলকে পরিণতি ভোগ করার জন্য প্রস্তত থাকতে বলেন তিনি।

“এটা একবারেই পরিষ্কার বিষয়, ক্লাবগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা সুপার লিগের দল নাকি ইউরোপিয়ান ক্লাব (চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলবে)। যদি বলে সুপার লিগের, তাহলে অবশ্যই তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারবে না…তারা যদি এই সিদ্ধান্তই নিতে চায়, তাহলে তারা তাদের নিজেদের প্রতিযোগিতায় খেলুক।”

এখনও সুপার লিগ বাস্তবায়নে চেষ্টা করে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে টিকে আছে কেবল রিয়াল। আগামী মঙ্গলবার তাদের প্রতিপক্ষ চেলসি। টিভি স্বত্বসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এবারের আসর থেকে কোনো দলকে নিষিদ্ধ না করার আভাস আগেই দিয়েছেন চেফেরিন। গত শুক্রবারের উয়েফার সভায়ও সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চেফেরিনের এই হুমকি মূলত আগামী মৌসুমকে ঘিরে। সুপার লিগ আপাতত মৃতপ্রায়। তবে, আবারও কোনো নাটকীয়তায় এটি আলোর মুখ দেখলে এর দলগুলোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ বর্তমানের ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতাটির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই তারা সুপার লিগ গড়তে চাচ্ছে।

বিতর্কিত লিগটির ঘোষণা আসার পর দিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাটের ঘোষণা দেয় উয়েফা। ২০২৪ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া সেই ফরম্যাটেরও সমালোচনা করেছেন রিয়াল সভাপতি।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হলেও এখনও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেনি উয়েফা। তবে সেই পথে যাওয়ার আভাস দিলেন চেফারিন।

“আমরা আইনি বিশেষজ্ঞের মতামতের অপেক্ষায় আছি, এরপরই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জানাব। তবে প্রত্যেকেরই তাদের সিদ্ধান্তের জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে এবং এটা তারা জানে।”

“আমার মতে, যারা ভুল স্বীকার করেছে এবং বলেছে ‘আমরা প্রকল্পটি থেকে সরে দাঁড়াবো’-তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। বাকিদের ক্ষেত্রে, আমি ‘প্রকল্পটি মৃত’ বললেও তারা সম্ভাবত বিশ্বাস করতে চায় না।”

সদস্য দেশগুলোর ফুটবল ফেডারেশন, জাতীয় সংস্থা ও লিগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় উয়েফা। শুক্রবারের ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান চেফারিন।

“বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বিভিন্ন দেশের ফুটবল ফেডারেশন, জাতীয় সংস্থা ও লিগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার বিষয়ে আজ (শুক্রবার) কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আমরা একমত হয়েছি। আমরা এটা করব আগামী সপ্তাহে, এরপর দেখা যাবে কী হয়।”

“নির্দিষ্ট লিগগুলো কী করে, দেখতে হবে। ফেডারেশনগুলো কী করে, এবং উয়েফা কী করতে পারে, সেটাও দেখার বিষয় ।”