অফিসিয়াল হিসাবে যদিও পেলেকে আগেই ছাড়িয়ে গেছেন রোনালদো। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পেলের অফিসিয়াল গোল ৭৫৭টি। ৭৫৯ গোল নিয়ে শীর্ষে ছিলেন অস্ট্রিয়া ও চেকোশ্লাভাকিয়ার (সেই সময়কার) ফুটবলার ইয়োসেপ বিকান। মাস দুয়েক আগেই রোনালদোর গোল হয়ে যায় ৭৬০টি।
ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার স্বীকৃতি তখনই নানা জায়গা থেকেই দেওয়া হয় রোনালদোকে। কিন্তু সেই রেকর্ডের সঙ্গে একমত ছিলেন না অনেকেই। চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে, বিকানের ক্যারিয়ার পুনরায় পর্যালোচনা করে তারা এই স্ট্রাইকারের গোল পেয়েছেন ৮২১টি!
পেলের নিজের মতে, তার অফিসিয়াল গোল ৭৬৭টি। সাও পাওলোর রাজ্য দলের হয়ে ৯টি ও ব্রাজিলের সামরিক দলের হয়ে তার ১ গোল অফিসিয়াল হিসেবে বিবেচনার বাইরে রাখা হলেও তা অফিসিয়াল বলেই দাবি তার।
আবার, ফুটবল পরিসংখ্যানের মোটামুটি বিশ্বস্ত সংস্থা বলে পরিচিত রেক.স্পোর্ট.সকার স্ট্যাটিসটিকস ফাউন্ডেশনের মতে, পেলের অফিসিয়াল গোল আসলে ৭৭৫টি। পেলের নিজের দাবির বাইরেও সাও পাওলোর নির্বাচিত দল ও সামরিক দলের হয়ে তার আরও ৮টি গোল সংস্থাটি খুঁজে পেয়েছে।
বিপত্তির জায়গা হলো, সর্বজন স্বীকৃত অফিসিয়াল কিছু ফুটবল পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে নেই। এখনকার মতো পরিসংখ্যানের খুঁটিনাটি বিস্তারিত হিসাব রাখা হতো না একসময়। আগের যুগের অনেক কিছুই তাই এখন পড়ে রয়েছে আড়ালে, কিংবা আছে ধোঁয়াশা।
তবে অফিসিয়াল হিসাব বা বিতর্ক যেটাই থাকুক, রোনালদো নিজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন পেলের দাবিকেই। জানুয়ারিতে ৭৬০ গোল হওয়ার পরও তাই উদযাপন করেননি। অপেক্ষায় ছিলেন পেলের দাবি করা ৭৬৭ গোল ছাড়িয়ে যাওয়ার।
রোববার সেরি আর ম্যাচে কাইয়ারির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকের দেখা পান রোনালদো। পেলেকে ছাড়িয়ে তার গোল এখন ৭৭০টি।
ম্যাচের পর ইনস্টাগ্রামে দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়ে রোনালদো জানান তার ভাবনা। তার লেখার পুরোটা তুলে ধরা হলো এখানে।
“ গত কয়েক সপ্তাহে খবর ও পরিসংখ্যানে ভরে গেছে যে, পেলের ৭৫৭ অফিসিয়াল গোল ছাড়িয়ে আমি বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের শীর্ষ স্কোরার হয়ে গেছি। যদিও সেই স্বীকৃতির জন্য আমি কৃতজ্ঞ, তবে এখন সময় হয়েছে ব্যাখ্যা করার যে, কেন আজকের আগ পর্যন্ত আমি সেই রেকর্ডকে বিবেচনায় নেইনি।”
“ এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তোর (পেলে) প্রতি আমার চিরস্থায়ী ও শর্তহীন অনুরাগ, বিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগের ফুটবলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এতটাই যে, সাও পাওলো রাজ্য দলের হয়ে তার ৯ গোল ও ব্রাজিলিয়ান সামরিক দলের হয়ে ১ গোল ধরে তার ৭৬৭ গোলকেই আমি বিবেচনায় নিয়েছি। ওই সময় থেকে এখন পৃথিবী বদলে গেছে, ফুটবলও বদলেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা নিজের সুবিধামতো ইতিহাস মুছে দিতে পারি।”
“ আজকে, আমার পেশাদার ক্যারিয়ারের ৭৭০ অফিসিয়াল গোলে পৌঁছানোর পর, আমার প্রথম কথাগুলি সরাসরি পেলের জন্যই। ফুটবলবিশ্বে এমন কোনো খেলোয়াড় নেই, পেলের খেলা, তার গোল ও অর্জনের কথা যে শুনে বেড়ে ওঠেনি। আমিও ব্যতিক্রম নই। এই কারণেই আমার এখন উচ্ছ্বাস ও গর্বের কমতি নেই যে, পেলের রেকর্ড ছাড়িয়ে ফুটবলের গোলের তালিকায় আমি এখন শীর্ষে। মাদেইরায় (রোনালদোর জন্ম শহর) বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে যা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি।”
“ আমার সঙ্গে এই অসাধারণ ভ্রমণের যারা অংশ ছিলেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার সব সতীর্থ, আমার প্রতিপক্ষরা, বিশ্বজুড়ে এই নান্দনিক খেলাটির সব ভক্ত-সমর্থক এবং সবকিছুর ওপরে আমার পরিবার ও কাছের বন্ধুরা, বিশ্বাস করুন, আপনাদের ছাড়া এটা আমি করতে পারতাম না।”
“ এখন পরের ম্যাচ আর সামনের চ্যালেঞ্জ, পরের রেকর্ড ও পরবর্তী ট্রফিগুলেরার জন্য তর সইছে না আমার! বিশ্বাস করুন, এই গল্প শেষ হতে এখনও ঢের বাকি! ভবিষ্যৎ সামনেই এবং ইউভেন্তুস ও পর্তুগালের হয়ে জয়ের অনেক কিছু এখনও বাকি আছে।”
“ আমার এই ভ্রমনের সঙ্গী হন! চলুন, এগিয়ে যাই!”
রোনালদোর হ্যাটট্রিকের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি দিয়ে আবেগঘন লেখায় অভিনন্দন জানান পেলে নিজেও।