নাশতার টেবিলেই শুরু হয়েছিল ভারতীয়দের সঙ্গে রিংকিদের লড়াই

নাশতার টেবিলে দেখা ভারতীয় শুটারদের সঙ্গে। চট করে এক ভাবনা এলো রিংকিদের মনে, রেঞ্জের আগে এখানেই শুরু হোক লড়াই, মনস্তাত্ত্বিক খেলা! যেই ভাবা সেই কাজ। জিএম হায়দার ভারতের এক শুটারকে ডেকে বলে বসলেন, ‘দেখো আমরা এই তিনটা সোনাই নেব, পারলে ঠেকাও।’ এ কথা শুনে প্রতিপক্ষের সেই শুটারের চেহারাটা হয়েছিল দেখার মতো! ২৫ বছর আগের মাদ্রাজ এসএ গেমসের স্মৃতি আওড়াতে গিয়ে আনমনে হেসে ওঠেন সোনা জয়ী সাইফুল আলম চৌধূরী রিংকি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2020, 06:18 AM
Updated : 11 May 2020, 03:37 PM
করোনাভাইরাস প্রকোপের এই মন খারাপ করা সময়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) সোনা জয়ী অ্যাথলেটরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনাচ্ছেন তাদের স্মৃতিময় দিনগুলোর গল্প। ৫১ বছর বয়সী রিংকি ফিরে তাকালেন ১৯৯৫ এসএ গেমসে। 

নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারায় গত এসএ গেমসে শুটাররা দেশকে উপহার দিতে পারেনি সোনার পদক। কিন্তু প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে এই ডিসিপ্লিন থেকেই সবচেয়ে বেশি সাফল্যের হাসি হেসেছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ২২টি সোনা এসেছে শুটারদের হাত ধরে। যার মধ্যে দলীয় ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে পাঁচটি সোনার পদকে খোদাই করা রিংকির নাম।

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে রিংকির আলো ছড়ানোর শুরু ১৯৯৩ সালের ঢাকা এসএ গেমসে। সেবার এয়ার রাইফেলে (৬০ শটস) ৫৮০ স্কোর গড়ে বাজিমাত করেছিলেন কুষ্টিয়া থেকে উঠে আসা এই শুটার। ফজলে রাব্বি এলাহী ও সৈয়দ আসবাব আলী ফয়েজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেরা হয়েছিলেন এই ইভেন্টের দলগত বিভাগেও।

সোনালী সময় রিংকি বয়ে নিয়ে যান পরের আসর মাদ্রাজেও। ছাপিয়ে যান ঢাকার সাফল্যকে। এয়ার রাইফেলের ব্যক্তিগত ও দলগত’র মুকুট ধরে রাখার সঙ্গে সোনা জয় করেন স্মল বোর ফ্রি রাইফেল থ্রি পজিশনের দলগত বিভাগে।

মাদ্রাজে এয়ার রাইফেলের দলগত বিভাগে রিংকির সঙ্গী ছিলেন ফিরোজ হোসেন পাখি ও আসবাব আলী। স্মল বোর দলগতর সঙ্গী নাসিরউদ্দিন জনি ও জিএম হায়দার। সেবারই নাশতার টেবিলে ঘটেছিল ওই মজার ঘটনা।

“সকালে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের প্রতিযোগিতা ছিল। প্রস্তুতি ভালো ছিল বলে ভালো ফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম আমরা। বরাবরের মতো ওই টুর্নামেন্টেও আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ভারত। শ্রীলঙ্কারও ভালো শুটার ছিল। সকালে যখন আমরা নাশতা করতে গেলাম, একই টেবিলে ভারতের খেলোয়াড়ও বসেছিল। তখনই ঘটেছিল ওই হাসির কাণ্ড।”

“নাশতা সারছি। গল্পও করছি। টেবিলে ভারতের যে শুটার বসেছিল, ওর নাম ছিল পালানগাপ্পা। ওর উদ্দেশে হায়দার বলল, ‘দেখে নিও, আমরা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তিনটি পুরস্কারই নিব। যদি পারো ঠেকাও।’ হুট করে এই কথা শুনে তো ভারতের ওই শুটার থতমত খেয়ে গেলো। দেখলাম ওর মুখ শুকিয়ে গেছে! এরপর কিন্তু আমরা সত্যি সত্যিই জিতেছিলাম। তখন ওর থতমত হয়ে যাওয়া মুখটা আরও বেশি মনে পড়ছিল (হাসি)।”

সাফ ও কমনওয়েলথ গেমসের সোনা জয়ী সাবরিনা সুলতানার সঙ্গে সাত পাঁকে বাঁধা পড়া রিংকি স্মৃতি আওড়ে জানালেন ১৯৯৩ এসএ গেমস নিয়েও অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। সতীর্থদের চিৎকারে স্নায়ুর লাগাম ছুটে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুই পয়েন্টের ব্যবধানে সতীর্থ ফজলে রাব্বিকে হারিয়ে এয়ার রাইফেলের ব্যক্তিগত ইভেন্টে হয়েছিলেন সেরা।

“সেবার প্রতিটি সিরিজ শটের পর আমাদের পয়েন্ট টুকে জমা দিতে হত। চতুর্থ সিরিজ পর্যন্ত ভালো করলাম। পঞ্চম সিরিজে ১০ শটের সবগুলোতেই ১০ করে মারি। ওই সময় একশতে একশ অনেক বড় ব্যাপার ছিল। কিন্তু পঞ্চম সিরিজ শেষের পর ইচ্ছে করেই পয়েন্ট জমা দেইনি। ভেবেছি সবাই জেনে ফেললে হৈ-হুল্লোড় শুরু করবে। আমিও চাপে পড়ে যাব।”

“ষষ্ঠ সিরিজে আটটা শট দিয়েছি। দুইটা বাকি আছে। তখন ভাবলাম আগের শিটটা জমা দিয়ে দেই। ওরা হিসেব কষতে কষতে বাকি দুই শট নিয়ে নিতে পারব। এরপরই শুনি বিকট শব্দ। আমার সোনা নিশ্চিত হয়ে গেছে ভেবে সবাই উল্লাস শুরু করে দিয়েছে! তখন তো আমি আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না! হঠাৎ মনে হলো, আরে, আমি না পারলেও তো সোনা আমাদেরই থাকবে। তারপরও সেরা শট দিতে পারিনি কিন্তু ঠিকই সোনা জিতেছিলাম।”