২০১৫ সালে ইয়াং এলিফ্যান্টসের যাত্রা শুরু। নামের সঙ্গে মিলিয়ে লোগোর পুরোটা জুড়ে হাতির মাথা। চার বছর আগে জন্ম নেওয়া দলটির শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ দিয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অভিষেক। এবং অভিষেকটাও তারা রাঙিয়ে রাখল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে।
এশিয়ার ক্লাব ফুটবলে ইয়াং এলিফ্যান্টস ‘হাতি’ নয় মোটেও। তেমন কোনো পরিচিতি নেই। দলটির ‘নেই’-এর তালিকাও বেশ বড়। বিদেশী কোনো খেলোয়াড় নেই, ক্লাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট নেই, ক্লাব র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান নেই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় যা কিছু আছে, সেগুলোই তুলে ধরলেন সালভারাস, যিনি নিজেও দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র এক সপ্তাহ আগে!
“এই দলটার অধিকাংশ খেলোয়াড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাইস্কুলে পড়ে। কয়েকজনের বয়স ১৮ বছর। ১৯/২০ বছর বয়সীও আছে। গড় বয়স ২০ বলতে পারেন। এমনকি ১৭ বছর বয়সী খেলোয়াড়ও আছে দলে। যেমন আমাদের দ্বিতীয় গোলরক্ষকের বয়স ১৭ বছর।”
“কিন্তু এই ছেলেদের লড়াকু মানসিকতা আছে। তারা ঐক্যবদ্ধ। উত্থানের সময় তারা একসঙ্গে ওঠে, পতনের সময়ও একসঙ্গে পড়ে। সবসময় তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, পাশে থাকে। আমি মনে করি, এটাই এই ছেলেদের বিশেষত্ব।”
কোচের কথাগুলো একটুও বাড়তি মনে হয় না। পাঁচ বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে নামা মোহনবাগানের বাগান গুঁড়িয়ে দিয়েছে দলটি। স্প্যানিশ কোচ হোসে আন্তোনিওর কৌশলকে ম্যাচজুড়ে টেক্কা দিয়েছে। শেষ দিকে পেনাল্টি ঠেকিয়ে দশজনের দল নিয়ে বুলেট গতির পাল্টা আক্রমণে তুলে নিয়েছে গোলও। সালভারাস জানালেন বাড়ির মতো পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণেই তার শিষ্যরা সামলে নিতে পারে সব পরিস্থিতি।
“মাত্র এক সপ্তাহ আগে থেকে দলটার সঙ্গে কাজ করেছি। এই দলটার আগে যিনি কোচ ছিলেন, তার সঙ্গেও কাজ করেছি। তিনি চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নিয়েছি।”
“যখনই আমরা বল হারিয়েছে, দ্রুত ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। গত আট দিনে আক্রমণের কৌশলের পাশাপাশি এ দিকগুলো নিয়েও কাজ করেছি। এই ছেলেরা তাদের কাজ এবং দায়িত্ব জানে। এবং তারা সেটা ভালোভাবে প্রয়োগও করেছে।”
“আমাদের ক্লাব প্রেসিডেন্টও অন্য টাইপের মানুষ। সে নিজের অবস্থান থেকে নেমে এসে ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে। বেঞ্চে বসে থাকে অনুশীলনের সময়। কিছু নির্দেশনাও দেয় ছেলেদের অনুপ্রাণিত করতে। ক্লাবের পরিবেশ একেবারে পরিবারের মতো।”
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ও লাওসের অবস্থান বর্তমানে ১৮৭তম স্থানে। লাওসকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ডে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে জেমি ডের দল। সালভারাসের কথাতেও উঠে এলো দেশটির ফুটবলের দৈন্যতা। এবং তা কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টাও।
“আমাদের ক্লাব ফুটবলের সবকিছু ফেডারেশনের সাহায্যে হয়। তবে জিমনেশিয়াম, মাঠ এগুলো আছে ইয়াং এলিফ্যান্টসের। মানের দিক থেকে এই অবকাঠামো ও ফ্যাসিলিটিজগুলো ইউরোপীয়দের মতো নয়, এশিয়ার মানের মতো।”
“লাওসের জাতীয় দলের ফুটবল এ মুহূর্তে নিচের দিকে। ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সম্ভাব্য সবকিছু করার চেষ্টা করছে। ফুটবলকে উপরের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিছু কোচ এনেছে, যারা ফুটবলারদের পেশাদার করার কাজ করছে। আজকের এই ফলটাও কিন্তু সে বার্তা দিচ্ছে-লাওসের ফুটবল উপরের দিকে উঠছে।”
ইয়াং এলিফ্যান্টস কী বড় হাতি হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে?