খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সিলেট বিকেএসপি

মূল শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা সিলেট বিকেএসপিতে গেলে শুরুতে চারপাশের পরিবেশ দেখলে ভালোই লাগবে। কোলাহল নেই। চারপাশ খোলামেলা। কিন্তু ভেতরে থাকা শিক্ষার্থী, কোচের সংখ্যা, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকালে অস্থিচর্মসার চেহারাটা প্রকটভাবে বেরিয়ে আসে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2018, 01:28 PM
Updated : 3 Oct 2018, 02:09 PM

২০০৫ সালে ১৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে সিলেট বিকেএসপি। ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারিতে একাডেমি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ফুটবলার তৈরি স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ার পর ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। সেই থেকে আবার সিলেট বিকেএসপি চলছে নিজেদের মতো করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, চলছে ধুঁকে ধুঁকে চলছে।

একটা সুইমিংপুল আছে কিন্তু পানি নেই। জিমনেশিয়ামে নেই আধুনিক কোনো সরঞ্জাম। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যাও নগণ্য। শিক্ষার্থীর ৩০ জন। কোচ মাত্র দুজন।

শাহিনুল হক ও ফারুক হোসেন-এই দুই কোচের মধ্যে আবার শাহিনুল ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য আছে ৪ জন শিক্ষক। বাবুর্চি, নিরাপত্তারক্ষী সব মিলিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ জন। প্রসাশনিক বিষয়গুলো দেখার পর কোচিংয়ে কতটা সময় দিতে পারেন জানতে চাইলে শাহিনুল জানালেন আরও কোচ দরকার তাদের।

“আমি যত কাজই করি, ওই কাজগুলো শেষ করার পর আমার প্রাধান্য থাকে কোচিং করানোর। আরও একজন হলে ভালো হয়। ইতোমধ্যে এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। কেননা এই প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করি। কিন্তু এগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে। স্যারেরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দ্রুত সবকিছু দেওয়ার। তাই আপাতত আমি ও ফারুক নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে চালাচ্ছি।”

বিভাগীয় পর্যায়গুলোতে থাকা বিকেএসপিগুলোর মধ্যে ঢাকা বিকেএসপিতে আছে ১৭টি বিভাগ। দিনাজপুর, বরিশালেও আছে একাধিক বিভাগ। চট্টগ্রাম বিকেএসপিতে একটি বিভাগ ক্রিকেট। সিলেটেও বিভাগ মাত্র ১টি; মানে এই ৩০ শিক্ষার্থীই ফুটবলার। শুধু এক বিভাগ নিয়ে একটা বিকেএসপির চলার প্রসঙ্গ পাড়তে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জানালেন দ্রুতই যোগ হবে ক্রিকেট।

“বর্তমানে শুধু ফুটবলই চালু আছে। আর কোনো বিভাগ নেই। ফুটবলারদের বাছাই করা হয়েছিল ঢাকা থেকে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে এই ব্যাচের ক্লাস সেভেন থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালের বাছাই করা ব্যাচটার পুরোটাই এখানে এসেছে। স্যারেরা বলেছেন এ বছর এখানে ক্রিকেটও শুরু হবে।”

মাঠ ও অবকাঠামোগুলোর দুরবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করলে ফুটবলে ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ শাহীনুল জানালেন, প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছেন; সেগুলো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে।

“স্কুল বিল্ডিং হবে। সুইমিংপুলের সংস্কার হবে। ফুটবলের জন্য টার্ফ বসবে। অন্য দরকারি ফ্যাসিলিটিজও যোগ হবে। ছাত্ররা পরীক্ষা দেবে (জেএসসি) এখান থেকে। এখানে বৃষ্টি হয় বেশি। এখানে মাঠে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। বৃষ্টি হলে ইনডোরে কার্যক্রম করেছি। মাটি ফেলার কারণে এখন সকালে বৃষ্টি হলেও বিকালে বিকেলে খেলার উপযোগী হয়।”

“জিমনেশিয়ামের জন্য ঢাকা বিকেএসপি থেকে একটা টার্ফ নিয়ে এসেছি। হকির যে টার্ফ ছিল সেটা নিয়ে এসেছি। মাল্টি জিমনেশিয়ামে সব উপকরণই চলে আসবে। এই ছেলেদের ক্লাস সেভেন ভর্তি করা হয়েছিল। এই বয়সে আসলে ওন বডি ট্রেনিং চলবে। এখন ওরা ক্লাস এইটে উঠেছে, ওদের মাল্টি জিম লাগবে।”

“এখন তো সুইমিংপুল বিকেএসপি বুঝে নিয়েছে। এটা সংস্কার করে কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রধান কার্যালয় থেকে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, দ্রুতই সব শুরু হবে। আসলে যেহেতু সিলেট বিকেএসপি আবার একেবারে নতুন করে শুরু হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু ব্যাপার আছে। কিছুদিন আগে মহাপরিচালক এসেছিলেন। তিনি দেখে গেছেন। দরকারি সবকিছু শুরু হবে।”

শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হুসাইন জানালেন শনি, সোম ও বুধবার সকালে তাদের অনুশীলন নেই। রবি, মঙ্গল-বৃহস্পতি সকালে থাকে। তবে সপ্তাহের বাকি ছয় দিনই বিকালে দুই ঘণ্টা অনুশীলন চলে। সকালের সেশন দেড় ঘণ্টা; বিকালে দুই ঘণ্টা। সব মিলিয়ে তাদের সময়টা খারাপ যাচ্ছে না।

কিন্তু প্রশ্নটা যখন সব মিলিয়ে কেমন আছে সিলেট বিকেএসপি? শাহিনুলের উত্তরে সুন্দর আগামীর আশাবাদের চেয়ে বর্তমানের হতাশাই বেশি।

“ভালো নেই। মানতে হবে আমার মনের মতো নেই। এখন তো অনেক কাজ অসমাপ্ত আছে এবং এটা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু এটাও সত্যি, আমরা আসার পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছি। কাজগুলো শুরু হয়েছে-বাকিটা শেষ করতে হবে।”