যেভাবে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

বিশ্বকাপ শুরুর আগে ক্রোয়েশিয়াকে ফেভারিটের তালিকায় উপরের দিকে রেখেছিলেন খুব কম মানুষই। সবাইকে চমকে দিয়ে চলতি আসরে অপরাজিত থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছেছে জ্লাতকো দালিচের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2018, 02:23 PM
Updated : 14 July 2018, 02:28 PM

রোববার মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে তারা। 

গ্রুপ পর্ব:

ক্রোয়েশিয়া ২-০ নাইজেরিয়া

১৯৯৮ সালের পর চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। বিরতির আগে আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়াটরা। দ্বিতীয়ার্ধে স্পট কিক থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুকা মদ্রিচ।

এর আগে ‘ডি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা অপ্রত্যাশিতভাবে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করায় কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়ামে এই জয়ে শুরুতেই সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায় ক্রোয়েশিয়া।

ক্রোয়েশিয়া ৩-০ আর্জেন্টিনা

দ্বিতীয় ম্যাচে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখায় ইউরোপের ছোট দেশটি। প্রথমবারের মতো ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দলের বিপক্ষে।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক উইলি কাবাইয়েরোর মারাত্মক ভুলে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন আন্তে রেবিচ। ৮০তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শটে ব্যবধান বাড়ান অধিনায়ক মদ্রিচ। আর যোগ করা সময়ে বড় জয় নিশ্চিত করেন ইভান রাকিতিচ।

টানা দুই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে জ্লাতকো দালিচের দল।

ক্রোয়েশিয়া ২-১ আইসল্যান্ড

নকআউট পর্ব আগেই নিশ্চিত হওয়ায় রস্তোভ অ্যারেনায় গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচের একাদশে নয়টি পরিবর্তন আনেন দালিচ। বিরতির পর দলকে প্রথম গোল এনে দেন মিডফিল্ডার মিলান বাদেলেই। গিলফি সিগুর্দসনের সফল স্পট কিকে সমতায় ফেরে আইসল্যান্ড। শেষ মুহূর্তে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে জয়সূচক গোলটি করেন ইভান পেরিসিচ।

টানা তিন জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোয় পা রাখে ক্রোয়েশিয়া। এর আগে কখনোই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই জয় পায়নি তারা।

শেষ ষোলো: ক্রোয়েশিয়া ১-১ ডেনমার্ক (পেনাল্টি শুট আউটে ৩-২ গোলে জয়ী ক্রোয়েশিয়া)

নিজনি নভগোরোদে ম্যাচের প্রথম মিনিটে প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যায় ডেনমার্ক। মাটিয়াস ইয়োরগেনসেনের গড়ানো শট ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের পায়ে লেগে জালে ঢুকে যায়। চতুর্থ মিনিটেই অবশ্য সমতা ফেরান মারিও মানজুকিচ।

নির্ধারিত সময়ে অবশ্য আর কোনো গোলের দেখা পায়নি কেউই। অতিরিক্ত সময়ে লুকা মদ্রিচের পেনাল্টি ঠেকিয়ে ডেনমার্ককে ম্যাচে রাখেন কাসপেস স্মাইকেল।

টাইব্রেকারেও দুটি শট ঠেকান স্মাইকেল। কিন্তু ক্রোয়াট গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচ বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে তিনটি শট রুখে দিয়ে দলকে পৌঁছে দেন শেষ আটে।

কোয়ার্টার-ফাইনাল: ক্রোয়েশিয়া ২-২ রাশিয়া (পেনাল্টি শুট আউটে ৪-৩ গোলে জয়ী ক্রোয়েশিয়া)

সোচির ফিশৎ স্টেডিয়ামে মিডফিল্ডার দেনিস চেরিশেভের দুর্দান্ত গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যাওয়ার পর আন্দ্রেই ক্রামারিচের হেডে দ্রুতই সমতায় ফেরে জ্লাতকো দালিচের দল।

নির্ধারিত সময়ে কোনো দলই আর গোলের দেখা না পেলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তাতে দুর্দান্ত এক হেডে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন দোমাগোই ভিদা। কিন্তু হেডেই সমতা ফিরিয়ে ম্যাচ টাইব্রেকারে নেন রুশ ডিফেন্ডার মারিও ফের্নান্দেস।

পেনাল্টি শুট আউটে আবারও ক্রোয়াটদের ত্রাতা হয়ে আসেন দানিয়েল সুবাসিচ। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনার পর একই বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে টাইব্রেকারে দুটি জয় তুলে নিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে পৌঁছে ক্রোয়েশিয়া।

সেমি-ফাইনাল: ক্রোয়েশিয়া ২-১ ইংল্যান্ড

মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে পঞ্চম মিনিটেই কিরান ট্রিপিয়ারের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। প্রথমার্ধে মোটেও ছন্দে ছিলেন না মদ্রিচ, মানজুকিচরা।

বিরতির পর শিমে ভারসালকোর ক্রসে সমতা ফেরান পেরিসিচ। চার মিনিট পর ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ডের শট পোস্টে লেগে না ফিরলে নির্ধারিত সময়েই জয় পেত ক্রোয়াটরা। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে দলকে জয় এনে দেন মানজুকিচ। প্রথমবারের মতো ফাইনালে পৌঁছে ক্রোয়েশিয়া।