টাইব্রেকারে রাশিয়াকে হারিয়ে শেষ চারে ক্রোয়েশিয়া

অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে গোল করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে গিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ভাগ্য পরীক্ষায় গড়ানো রোমাঞ্চকর ম্যাচটি জিতে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2018, 05:45 PM
Updated : 7 July 2018, 09:38 PM

সোচির ফিশৎ স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে নির্ধারিত সময়ে ছিল ১-১ সমতা। অতিরিক্ত সময় শেষে স্কোর ২-২। টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়া জিতেছে ৪-৩ গোলে।

দেনিস চেরিশেভের দুর্দান্ত শটে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। আন্দ্রেই ক্রামারিচের হেডে খানিক বাদেই সমতা ফেরায় ক্রোয়েশিয়া। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে দুর্দান্ত হেডে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে দিয়েছিলেন দোমাগোই ভিদা। কিন্তু হেডেই সমতা ফিরিয়ে ম্যাচ টাইব্রেকারে নেন মারিও ফের্নান্দেস। পেনাল্টি শুট আউটে শুরুতেই দানিয়েল সুবাসিচ একটি শট ঠেকান। ইগর আকিনফিভও একটি শট ঠেকিয়ে আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু নায়ক থেকে ভিলেন ফের্নান্দেস, মারেন একেবারে পোস্টের বাইরে।

আগামী বুধবার মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়াম সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে ক্রোয়েশিয়া।

ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ আর রাশিয়ার প্রতিআক্রমণে ম্যাচের শুরু থেকেই ছড়ায় রোমাঞ্চ। শেষ ষোলোর টাইব্রেকারে দুই দলের নায়ক দুই গোলরক্ষককেই থাকতে হয় ব্যস্ত।

তবে ৩১তম মিনিটে ভিয়ারিয়াল মিডফিল্ডার চেরিশেভ যে শট নিলেন তা চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না সুবাসিচের। মাঝমাঠ থেকে আর্তেম জুবাকে বল বাড়িয়ে সামনে এগোন চেরিশেভ, বল ফেরত পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে উঁচু শটে ওপরের বাঁ কোণা দিয়ে জালে জড়ান। বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ গোলে উচ্ছ্বাসে মাতান গ্যালারি।

জবাব দিতে বেশি দেরি করেনি ক্রোয়েশিয়া। ৩৯তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে মারিও মানজুকিচের দারুণ ক্রসে হেডে বল জালে পাঠান হফেনহাইম ফরোয়ার্ড ক্রামারিচ।

বিরতির পর লুকা মদ্রিচের পায়ে সূচনা হওয়া একের পর এক আক্রমণ রুখে যায় রাশিয়া। পক্ষে আসে ভাগ্যও। ৫৯তম মিনিটে ডি-বক্সের জটলায় বল পেয়ে ইভান পেরিসিচের নেওয়া নিচু শট আকিনফিভকে ফাঁকি দিলেও পোস্টের ভেতরের অংশে লেগে ফিরে।

দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণাত্মক খেলে পাল্টা আক্রমণে জোর দেওয়া রাশিয়া প্রথম ভালো সুযোগটা পায় ৭২তম মিনিটে। বদলি হিসেবে নামা ফরোয়ার্ড ফেদর স্মলভের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে নিতে পারে স্বাগতিকরা। কিন্তু দশম মিনিটে কর্নারে ডিফেন্ডার ভিদার লাফিয়ে ওঠা হেডে বল কয়েকজন ডিফেন্ডার আর আকিনফিভকে এড়িয়ে জালে জড়ালে জয়ই দেখছিল ক্রোয়াটরা।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়াকে রোখা যায়নি। ১১৫তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে লাফিয়ে হেডে সমতা ফেরান ফের্নান্দেস। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

স্মলভের প্রথম শটই ঠেকিয়ে দেন সুবাসিচ। মিডফিল্ডার ব্রজোভিচ ফাঁকি দেন আকিনফিভকে।

রাশিয়ার দ্বিতীয় শট নিতে এসে ভুল করেননি মিডফিল্ডার আলান জাগোয়েভ। এবার আকিনফিভ ফিরিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার কোভাসিচের শট।

এরপর ফের্নান্দেসের সেই পোস্টের বাইরে মারা শট। রিয়াল মাদ্রিদের আরেক মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের শট পোস্টে লেগে জালের ভেতরেই থাকায় এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া।

ডিফেন্ডার সের্গেই ইগনাশেভিচ রাশিয়ার চতুর্থ শটে গোল করেন।  ক্রোয়েশিয়ার ভিদাও ভুল করেনি।

পঞ্চম শটে দালের কুজিয়ায়েভ টিকিয়ে রাখেন স্বাগতিকদের আশা। বার্সেলোনার মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে পাঠিয়ে ভাঙেন স্বাগতিকদের স্বপ্ন।

এর আগে বিশ্বকাপে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুইবার খেলে প্রতিবারই হেরেছিল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালের সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে আর ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের কাছে ৩-১ ব্যবধানে হারে ক্রোয়াটরা। এবার স্বাগতিকবদের বিপক্ষে মিলল জয়।

১৯৯৮ সালে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিষেকে সেমি-ফাইনালে পৌঁছেছিল ক্রোয়েশিয়া। ২০ বছর পর এখন মদ্রিচদের সামনে ফাইনালে ওঠার সুযোগ।