আর্চারির শেষ আটে মামুন

এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হতাশার দিনে একমাত্র আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন আবুল কাশেম মামুন। শেষ মুহূর্তে স্নায়ুর চাপ সামলে ছেলেদের ব্যক্তিগত কম্পাউন্ডের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছেন এই আর্চার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2017, 12:57 PM
Updated : 28 Nov 2017, 01:02 PM

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার কাজাখস্তানের প্রতিযোগী আকবরআলি কারাবায়েভের সঙ্গে মামুনের লড়াই দারুণ জমে উঠেছিল। তিন তীর ছোঁড়ার প্রথম পর্বে দুজনে সমানে সমান ৩০-৩০। পরের পর্বে আকবরআলি ২৯-২৮ পয়েন্টে এগিয়ে। তৃতীয় পর্বে ২৯-২৮ পয়েন্টে এগিয়ে সমতা ফেরান মামুন।

চতুর্থ রাউন্ডে আবারও মামুনের ছন্দপতন; পিছিয়ে পড়লেন ৩০-২৮ পয়েন্টে। পঞ্চম রাউন্ডে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩০-২৭ পয়েন্টে তিনি পেছনে ফেলেন আকবরআলিকে। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপে ঠাসা লড়াইয়ে ১৪৬-১৪৫ পয়েন্টে জিতে সেরা আটে ঠাঁই করে নেন মামুন।

প্রথম রাউন্ডে পাকিস্তানের আব্দুল কাদিরকে ১৪১-১৩৮ পয়েন্টে হারানো মামুন দ্বিতীয় রাউন্ডে চাইনিজ তাইপের ওয়েং ই-চেংয়ের বিপক্ষে ১৪৯-১৪৫ ব্যবধানে জিতেছিলেন। নড়াইল থেকে উঠে আসা এই আর্চারের সামনে আরও কঠিন প্রতিপক্ষ, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় ভারতের অভিষেক ভার্মা।

র‌্যাংঙ্কিংয়ে ২৩তম স্থানে থাকা মামুন অবশ্য প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছেন না। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।

“প্রতিপক্ষ (আকবর আলি) খুবই শক্তিশালী। সে ৩০-২৯ এর নিচে স্কোর করে না। আমি তার থেকে ২ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলাম। যদি শেষ তিন তীরে ৩০ স্কোরও করতাম, তাও যথেষ্ঠ হতো না। তবে স্নায়ুর চাপ ধরে রেখে আমি ৩০ করলাম। সে হয়ত চাপ ধরে রাখতে পারেনি; ২৭ স্কোর পেল। আমি জিতে গেলাম।”

“আগামীকাল যদি আমার এই আত্মবিশ্বাস থাকে, শুটিং এমন হয় এবং বাতাসও অনুকূলে থাকে, তাহলে আমার সেমিতে ওঠার সুযোগ আছে। আজ যেমন, শেষ সময়ে কোচ যখন বললেন-কোন চাপ না নিয়ে ৩০ মেরে এসো। আমিও চাপহীন থেকে তিন তীরে ৩০ স্কোর করলাম। কোয়ার্টার-ফাইনালেও এমন চাপহীন খেলতে হবে আমাকে।”

মেয়েদের ব্যক্তিগত কম্পাউন্ডে সুস্মিতা বণিক দক্ষিণ কোরিয়ার সং ইয়ুন সোর কাছে ১৪৯-১৪৭ ব্যবধানে হেরে তৃতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেন। এ ইভেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়েন রোকসানা আক্তার, বন্যা আক্তার।

ছেলেদের ব্যক্তিগত রিকার্ভে হতাশ করেছেন রোমান সানা ও তামিমুল ইসলাম। কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে রোমান চাইনিজ তাইপের লি ইয়েন-ইউয়ের কাছে ৬-৪ সেটে হারেন। আগের রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার সজীব ডি সিলভাকে ৬-২ সেটে হারিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার লি উ সেওকের কাছে ৭-৩ সেটে হেরে তৃতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেন বাংলাদেশের আরেক আর্চার তামিমুল।

ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোয় সতীর্থ আর্চারদের ব্যর্থতায় হতাশ মামুন জানালেন দেশ-বিদেশে আরও বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেই কেবল তারা মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

“দেখুন, আমার টেম্পারামেন্ট ফিফটি-ফিফটি। যদি আরও গেমস খেলতাম, তাহলে অভিজ্ঞতা বাড়ত। আসলে আমরা যখন চাপহীনভাবে খেলি, তখন অনেক ভালো স্কোর গড়ি। কিন্তু যখনই বলে-রেডি, গেম স্টার্ট-তখনই বুকের ভেতর কাঁপাকাঁপি শুরু হয়। এত বড় একটা দেশ, এত বড় একটা টুর্নামেন্ট—এই বিষয়গুলো চলে আসে। তখন আমরা আর ইজি থাকতে পারি না। এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হলে আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দিতে হবে।”

এদিকে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্বর্ণ জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। কম্পাউন্ডের মিশ্র দলগত ইভেন্টের ফাইনালে ১৫৭-১৫৩ পয়েন্টে ভারতকে হারায় তারা।

রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টের স্বর্ণও জিতেছে তারা, জাপানকে ৬-২ সেটে হারিয়ে।