প্রশ্ন: এবারই তো প্রথম বাংলাদেশে এলেন? প্রতিবেশীর আমন্ত্রণে সাড়া দিতে এত দেরি হলো যে?
জিব মিলখা সিং: (হাসি) আমি আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছর জুড়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াই। গতরাতে ইয়াঙ্গুন থেকে এসেছি; এর আগে সিঙ্গাপুর ওপেন খেলেছি। আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়াতে মে ব্যাংক ওপেন খেলব। এরপর আশা করি একটু বিশ্রাম নিয়ে ইন্ডিয়ান ওপেন খেলব। এ সপ্তাহে দুবাইয়ে টুর্নামেন্ট ছিল কিন্তু আমি এটাকেই (বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন) বেছে নিলাম।
এই ৪৫ বছর বয়সেও দেখছি ঠাসা সিডিউল আপনার। একের পর এক টুর্নামেন্ট...
বাংলাদেশের গলফকে কেমন দেখছেন?
মিলখা সিং: বাংলাদেশের গলফ এখন বেড়ে উঠছে। এই বেড়ে ওঠা নিজে চোখে দেখা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি এ দেশের পেশাদার গলফারদের সঙ্গে খেলেছি। যেমন সিদ্দিকুরের সঙ্গে এশিয়ান ট্যুরে। তো আমারও মনে হলো অবশ্যই আমার এখানে আসা উচিত এবং সবকিছু দেখা উচিত।
একটু পেছনে ফেরা যাক। যখন গলফ শুরু করেছিলেন, তখনকার পরিস্থিতি কেমন ছিল? আপনাকে তো ভারতের গলফের দিকপাল বলা হয়।
মিলখা সিং: (দীর্ঘশ্বাস) যখন আমি গলফ শুরু করেছিলাম, তখন (ভারতে) এটাকে কেউ কখনই পেশা হিসেবে বিবেচনা করত না। তারা এটা বিনোদনের জন্য খেলত। কিন্তু আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি; ইউরোপে ভালো করেছি; যুক্তরাষ্ট্রে ভালো করেছি। সাফল্য পেয়েছি।
দেশের মানুষই আমাকে সম্মানটা দিয়েছে যে, আমি ভারতের গলফের পতাকাবাহক। বিশ্ব মানচিত্রে আমি ভারতের গলফকে তুলে ধরেছি। খুব ভাগ্যবান যে আমি সেটা করতে পেরেছি। এবং এখনও অনুভব করি, আমি আরও কিছু করতে পারি।
আপনাদের দেখানো পথে হেঁটে অনেকে উঠে এসেছে। অনির্বাণ, রশিদ খানদের দেখে নিশ্চয় তৃপ্তি বোধ করেন?
মিলখা সিং: ওদের নিয়ে অবশ্যই খুশি। অনির্বাণ লাহিড়ি খুবই ভালো করছে। আরেক তরুণ শুভঙ্কর শর্মাও দারুণ করছে; সে ভীষণ মেধাবী। গগনজিৎ, এসএসপি চৌরাশিয়া, রশিদ খান-অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে। ১৫/১৬ বছরের আরও অনেক তরুণ উঠে আসছে। আমি মনে করি, ভারতের গলফের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। আমি শুধু তাদের বলব-কঠোর পরিশ্রম করো এবং সবসময় জেতার জন্য মনকে শক্ত রাখো।
এখন এই যে তরুণদের পরামর্শ দিচ্ছেন। দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। আপনি কার কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছেন?
মিলখা সিং: আমি ভাগ্যবান যে, আমি অ্যাথলেট পরিবার থেকে এসেছি। আপনারা ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ মুভি দেখেছেন? মিলখা সিং আমার বাবা। তিনি আমাকে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করা শিখিয়েছেন, জীবনের মূল্য বুঝতে শিখিয়েছেন। আসলে আমি গলফ শুরু করেছিলাম; কেননা, বাবা এটা খেলা শুরু করেছিলেন। তখন আমার বয়স ছিল ৯ বছর।
আপনার বাবা কি এখনও গলফ খেলেন?
মিলখা সিং: তার বয়স এখন ৮৫ বছর। তবে এখনও সে সকালে উঠে হাঁটে। জগিং করে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। গলফও খেলে।
ছয়টি এশিয়ান ট্যুর, চারটি ইউরোপিয়ান ট্যুরের শিরোপা-এই সাফল্যের পেছনের গল্পটা বলবেন কি?
এই লম্বা ক্যারিয়ারের কোন কোন বছরকে আলাদাভাবে মনে রাখবেন?
মিলখা সিং: ২০০৬ ও ২০০৮ সাল। চারটি করে ট্রফি জিতেছিলাম। ২০০৮ সালে আমি র্যাঙ্কিংয়ে ২৮তম স্থানে উঠেছিলাম এবং এখন পর্যন্ত এটাই আমার সেরা। এশিয়া, ইউরোপ মিলিয়ে আমি ২৮টির মতো শিরোপা জিতেছি কিন্তু আমি এখনও শিরোপা জেতার জন্য ক্ষুধার্ত এবং মনে করি, আমার আরও জেতা উচিত।
কোন সাফল্যের স্মৃতি সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়?
মিলখা সিং: ২০০৬ সালে ভলভো মার্স্টার্স ওপেন (স্পেন), সবাই বলাবলি করছে, প্রথমবার খেলতে আসা কোনো গলফার এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতেনি কিন্তু আমি জিতেছিলাম। তাদের এটা বলার কারণ ছিল-কোর্সটা ভীষণ কঠিন। কিন্তু আমি চিন্তা করলাম, মাঠে নামব এবং নিজের সেরাটা দেওয়াটা চেষ্টা করব।
চাপ না নেওয়াটা কি তাহলে আপনার সাফল্যের অন্যতম সূত্র?
মিলখা সিং: দেখুন, ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দি মার্স্টার্স টুর্নামেন্টে (ভারতের প্রথম গলফার হিসেবে) যখন খেললাম, তখনকার কথা বলছি। সবাই এই কোর্সটাকে ভয় পায়, এটা কঠিন কোর্স। কিন্তু আমি সেটাকে ভালোবেসেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ১৯তম হয়েছিলাম। আসলে আপনাকে উপলক্ষ পেলে নিজেকে মেলে ধরতে হবে। খুব ইতিবাচকভাবে চাপ নিতে হবে। চাপ নিয়ে ভেঙে পড়া যাবে না; এমনভাবে নিতে হবে, যেন চাপ আপনার ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনে।
সাফল্য ক্ষুধার কথা বলছিলেন, যা পেয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট নয় বলেই কি?
মিলখা সিং: আমাদের গলফ নিয়ে এতটা জ্ঞান ছিল না, অনেক কিছু করার ছিল না কিন্তু এখন সবকিছু সহজলভ্য। তো সে তুলনায় আমি অনেক পেয়েছি।
কিন্তু পেশাদার গলফার হয়েছি ২৫ বছর। ১৯৯৩ সাল থেকে। যদি আমি ঘড়ির কাটাকে ২৫ বছর পিছিয়ে দিতে পারতাম, তাহলে নিজেকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলতাম- জিব মিলখা সিং অনেক কিছু করেছে কিন্তু আমাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। এটা আমি নতুনদেরও বলি।
আপনার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিশ্চয় বাংলাদেশের তরুণদের কাজে লাগবে।
এ দেশের সেরা গলফার সিদ্দিকুরকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?
মিলখা সিং: সে খুব ভালো খেলোয়াড়। আমি মনে করি সে দেশকে গর্বিত করেছে। বাংলাদেশের গলফকে সে বিশ্ব মানচিত্রে নিয়ে গেছে। লোকে জানে, এই ছেলেটা বাংলাদেশ থেকে এসেছে।
একজন গলফারের আর্দশ দিন কেমন হওয়া উচিত?
মিলখা সিং: তার কঠোর পরিশ্রম করা উচিত। তবে কোর্স ছেড়ে যাওয়ার পর সবকিছু ভুলে যাওয়া উচিত। আমি যেমন কোর্স থেকে যাওয়ার পর হলিউড-বলিউডের মুভি দেখি।
গলফের সাফল্যের সূত্র?
মিলখা সিং: আপনাকে জিততে হলে টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে হবে; চার দিনই ভালো খেলতে হবে।
যদি বিরুদ্ধ কন্ডিশন হয়?
মিলখা সিং: আপনাকে শুধু মানিয়ে নিতে হবে। ধরুন, আপনাকে ঠাণ্ডা কোনো অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, কি করবেন আপনি? আপনাকে মানিয়েই নিতে হবে।
কাকে গলফের আদর্শ মানেন?
মিলখা সিং: ফ্রেড কাপলস। টাইগার উডসও অনেক কিছু করেছে। আমার বাবাও অ্যাথলেট; তিনিও আমার আর্দশ।
প্রশ্ন: যদি গলফার না হতেন?
মিলখা সিং: হয়ত সরকারি চাকুরে হতাম!
বাবার মতো অ্যাথলেটিক্সে গেলেন না কেন?
মিলখা সিং: অ্যথলেটিকসে আগ্রহ ছিল কিন্তু বাবার মতো গতিময় ছিলাম না। আমি গলফ কোর্সে হাটা শুরু করলাম: সারা বিশ্বের কোর্সে গলফের বল এখনও তাড়া করা বেড়াচ্ছি!