ইংলিশ ফুটবল
লিভারপুলে নিজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও পারফরম্যান্সে তার কোনো প্রভাব পড়তে দিচ্ছেন না মোহামেদ সালাহ, আর এটাই সবাইকে আরও বেশি মুগ্ধ করছে।
Published : 22 Jan 2025, 05:03 PM
দিন যাচ্ছে, সময় ফুরিয়ে আসছে। তারপরও ক্লাবের পক্ষ থেকে চুক্তি নবায়ন নিয়ে ‘পাচ্ছেন না’ কোনো প্রস্তাব। এতে অসন্তোষ আছে, আছে ক্ষোভও; কিন্তু পারফরম্যান্সে তার কোনো প্রভাব পড়তে দিচ্ছেন না মোহমেদ সালাহ। ছুটছেন তিনি আপন ছন্দে, আর তার কাঁধে সওয়ার লিভারপুল।
দারুণ সুখময় এই যাত্রায় সবশেষ ম্যাচেও জালের দেখা পেয়েছেন সালাহ। তার দেখানো পথে আরেকটি জয় পেয়েছে লিভারপুল।
নতুন আঙ্গিকের এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তিনটি গোল হলো সালাহর এবং সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে তার মোট গোল ৩১ ম্যাচে ২২টি।
সতীর্থদের দিয়ে আরও ১৭টি গোল করিয়েছেন সালাহ। গোল ও অ্যাসিস্ট মিলিয়ে ক্লাবের জার্সিতে মোট ৩৯ গোলে জড়িয়ে তার নাম; ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
অ্যানফিল্ডে মঙ্গলবার রাতে লিলের বিপক্ষে প্রথমার্ধে কার্টিস জোন্সের থ্রু পাস ধরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন সালাহ। বিরতির পর ফরাসি ক্লাবটি ১০ জনের দল নিয়ে সমতা টানলেও, খানিক পরই সৌভাগ্যসূচক গোলে ব্যবধান গড়ে দেন হার্ভি এলিয়ট।
ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে, সাত ম্যাচে শতভাগ সাফল্যে ২১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে লিভারপুল। সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয়।
লিভারপুলের জার্সিতে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সালাহর মোট গোল ৫০টি; ৪৪টি এসেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, পাঁচটি গত মৌসুমের ইউরোপা লিগে এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাইপর্বে।
সবশেষ চমৎকার গোলটি দিয়ে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে নিয়েছেন সালাহ। আর অ্যানফিল্ডে তার মোট চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গোল এখন ২০টি।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে ইংলিশ দলগুলোর খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনো এক মাঠে বেশি গোল করার হিসাবে সালাহর উপরে আছেন কেবল ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক স্ট্রাইকার সের্হিও আগুয়েরো (২৩টি, ইতিহাদ স্টেডিয়ামে) ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফরোয়ার্ড রুড ফন নিস্টলরয় (২৩, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।)
রোমা ছেড়ে ২০১৭ সালের জুনে লিভারপুলে পাড়ি দিয়ে, অল্প সময়েই নিজেকে এখানে মানিয়ে নেন সালাহ। ওই সময়ের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের একজন হয়ে ওঠেন তিনি। সেই থেকে একইরকম ছন্দে এগিয়ে চলেছেন ৩২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
সময়ের সঙ্গে নানা প্রতিকূলতা এসেছে, চোট ছোবল দিয়েছে; কিন্তু কখনোই লম্বা সময়ের জন্য ছন্দ হারাননি তিনি। লিভারপুলের সাবেক ডিফেন্ডার স্টিফেন ওয়ার্নকের মতে, সালাহর এই দুর্বার ছুটে চলার পেছনের রসদ তার নিজের প্রতি আস্থা।
“সালাহর মুখে সবসময় একটা হাসি লেগে থাকে। সে গোল করবেই, নিজের মধ্যে এই বিশ্বাস তার সবসময় থাকে। আর এটাই তাকে বিপজ্জনক করে তোলে। তার সামর্থ্যের একজন খেলোয়াড়ের এটাই সেরা মানের মানসিকতা।”
চলতি মৌসুমে শুধু অ্যানফিল্ডে মোট ১৮ গোলে (সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১০টি গোল ও ৮টি অ্যাসিস্ট) জড়িয়ে সালাহর নাম।
লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার রবি ফাওলার অ্যামাজন প্রাইমে সালাহর প্রশংসায় বলেন, সে লিভারপুলের সত্যিকারের কান্ডারি।
“সে একজন বিজয়ী। গোলমুখে সে দারুণ স্বচ্ছন্দ। সে ওইসব খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন, যে একটি সুযোগ মিস করলে ভেঙে পড়ে না, কারণ পরেরটিতেই সে গোল করবে।”
অ্যামাজন প্রাইমে ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় সালাহ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন, এভাবেই এগিয়ে যেতে চান তিনি।
“আশা করি, এটাই শেষ নয়। এই গোলটি করতে পেরে আমি খুব গর্বিত। ম্যাচের আগে আমি ঠিক এতে মনোযোগী ছিলাম না।”
মৌসুমের শুরু থেকেই লিভারপুলে সালাহ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রথম কয়েক মাসে একাধিকবার এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছেন তিনি নিজে। তার কণ্ঠে ছিল অভিমানের সুরও। গত ডিসেম্বরেই যেমন তিনি বলেন, তার লিভারপুল থেকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে এসব কোনোকিছুই নিজের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে দেননি সালাহ। এবারের প্রিমিয়ার লিগে যেমন ১৮ গোল করে তালিকার শীর্ষে তিনি। দলটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগহ অনেক শিরোপা জয়ী তারকা এবারও শিরোপা জিততে মরিয়া, শুনিয়েছেন সেই কথাও।
কঠিন সময়ে তার এমন শক্ত মনোবলের প্রশংসা করেছে লিভারপুলের সাবেক ফরোয়ার্ড লুইস গার্সিয়া।
“সে কখনোই বলেনি যে, সে চলে যেতে চায়। ক্লাবও কখনও বলেনি, সে যেতে চায়। আমার মনে হয়, তারা তাকে স্বাভাবিক থাকতে দিচ্ছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে যাচ্ছে, সে গোল করেই চলেছে। সুতরাং, এই (অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ) পরিস্থিতি তার ওপর প্রভাব ফেলছে না।”