প্রায় ১২ বছর পর সান্তোসের জার্সিতে ফিরে ম্যাচ-সেরা হলেও অবশ্য পারফরম্যান্সে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি ৩৩ বছর বয়সী তারকা।
Published : 06 Feb 2025, 11:30 AM
ঠাসা গ্যালারির হাজার বিশেক দর্শক অপেক্ষায় ছিলেন রাজপুত্রের মাঠে নামার। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই মুহূতূ এলো। ১০ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে নামলেন নেইমার। স্টেডিয়ামের ঘোষকের কণ্ঠ হয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল মাঠময়। গান আর স্লোগানে মুখরিত চারপাশ। অধিনায়কের আর্মব্যান্ডপরিয়ে দেওয়া হলো তাকে। হাজার হাজার ফোনে ছবি আর ভিডিওতে স্থায়ী হয়ে থাকল সময়টুকু। কারও মুখে হাসি, কারও চোখে জল। গ্যালারিময় আবেগের স্রোতে ঘরের ছেলেকে স্বাগত জানালেন সমর্থকেরা।
সাও পাওলোর ফুটবলপাগল প্রতিভাবান ছেলেটি যে আঙিনা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা হওয়ার, ইউরোপিয়ান ফুটবল মাতিয়ে প্রায় এক যুগ পর সেখানেই তার প্রত্যাবর্তন হলো ৩৩তম জন্মদিনে।
ফেরার ম্যাচটি অবশ্য চমকপ্রদ কোনো পারফরম্যান্সে রাঙাতে পারেননি নেইমার। দু-একটি ঝলক দেখালেও খেলায় ছিল না ধার। তারপরও অবশ্য ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি তিনিই পেয়েছেন।
ব্রাজিলিয়ান পাউলিস্তা চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচটিতে বতাফোগোর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে সান্তোস।
নেইমারের ফেরার ম্যাচের স্বাক্ষী হতেই সান্তোসের গ্যালারি ভরে ওঠে খেলা শুরুর বেশ আগেই। তবে চোট কাটিয়ে ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় থাকা তারকাকে দেখতে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় ভক্তদের। অবশেষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে বদলি হিসেবে তাকে মাঠে নামানো হয়।
সান্তোসে একসময় তিনি পরেছেন ১৮, ৭ ও ১১ নম্বর জার্সি। এবার তাকে ১০ নম্বর জার্সি দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। কিংবদন্তি পেলের প্রতীক হয়ে ওঠা সেই জার্সি গায়ে তিনি নামেন। দুহাত তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্রষ্টার প্রতি।
চোটের কারণে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার অস্বস্তি আর জড়তা ছিল তার শরীরে ও পারফরম্যান্সে। দু-একবার অবশ্য জাদু দেখানোর চেষ্টা করেছেন। একবার গোল করার সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন বেশ। দুই ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে শট নিয়েছিলেন গোলে। কিন্তু গোলকিপার তা আটকে দেন দারুণ দক্ষতায়। আরও দুই দফায় তার পাস থেকে গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তবে কোনোটিই কার্যকর হয়নি।
প্রথমার্ধে পেনাল্টি গোলে এগিয়ে ছিল সান্তোস। পরে ৬৭তম মিনিটে গোল শোধ করে দেয় বতাফোগো।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই প্রতিপক্ষের ফুটবলাররা একের পর এক নেইমারের সঙ্গে কথা বলা, ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন।
পারফরম্যান্স যেমনই হোক, সান্তোসের হয়ে ফেরার মুহূর্তটিই তার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা পেয়ে গেছে।
“ভালোবাসার কোনো কিছু করতে পারার যে অনুভূতি, এটা প্রকাশ করার ভাষা জানা নেই আমার। সান্তোসকে প্রচণ্ড ভালোবাসি আমি এবং আজকে যখন মাঠে নেমেছি, ওই সময়ের অনুভূতি কোনোভাবেই বোঝাতে পারব না কাউকে।”
আরও কয়েকটি ম্যাচ খেললে সময়ের সঙ্গে পারফরম্যান্সও ভালো হবে বলে বিশ্বাস নেইমারের।
“ম্যাচটি খুব কঠিন ছিল। আমার বাবা ছিলেন মাঠে। তাকে আগেই বলেছিলাম, কঠিন ম্যাচ হবে। রক্ষণে ওরা অনেক ভালো দল, অনেকটা নিচে নেমে খেলে। আমাকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং আরও অনুশীলন করে যেতে হবে।”
“মাঠে আরও সময় কাটাতে হবে আমাকে, ম্যাচ খেলতে হবে। এখনও শতভাগ নই। আজকে রাতে খুব বেশি দৌড়ানো ও ড্রিবল করার আশা নিজেরও ছিল না। আমার মনে হয়, চার-পাঁচটি ম্যাচ খেললে আরও ভালো অনুভব করব।”