ইতিহাস গড়া জয়ের পরও আক্ষেপ ইন্টার মিলান কোচের

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথমবার এসি মিলানকে হারাতে পারলেও আরও বেশি গোল করা উচিত ছিল বলে মনে করেন ইন্টার মিলান কোচ ইনজাগি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2023, 05:17 AM
Updated : 11 May 2023, 05:17 AM

ডার্বির প্রবল চাপ, প্রতিপক্ষ সমর্থকদের উত্তাপ আর বিরুদ্ধ ইতিহাস, প্রতিপক্ষ কম ছিল না ইন্টার মিলানের। কিন্তু সবকিছুকে হারিয়েই তারা অর্জন করেছে জয়ের গৌরব। সেই তৃপ্তি আর সন্তুষ্টি স্পর্শ করছে সিমোনে ইনজাগিকে। তবে মনের কোণে একটু আক্ষেপও উঁকি দিচ্ছে ইন্টার কোচের। আরও গোল যে হতে পারত! 

ইতালিয়ান ফুটবলে তো মিলান ডার্বির চেয়ে বড় কিছু নেই। মিলানের দুই প্রবল প্রতিপক্ষ এবার মুখোমুখি হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে। ইতালিতে এই লড়াই পরিচিতি পেয়ে যায় ‘ইউরোডার্বি’ হিসেবে। ১১৪ বছরে দুই দলের ২৩৬তম লড়াই এটি, তবে ইউরোপ সেরার মঞ্চে ২০০৫ সালের পর প্রথমবার। 

দুই দলের মাঠ একই। তবে প্রথম লেগটি ছিল অফিসিয়ালি এসি মিলানের ঘরের মাঠ। তাদের দর্শকের দাপট ছিল বেশি। বুধবার খেলার শুরুর পরপরই সেই দর্শকদের স্তুম্ভিত করে দেয় ইন্টার মিলান। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের ৬ ম্যাচে স্রেফ ১টি গোল হজম করেছিল মিলান। এবার খেলার শুরুর ১১ মিনিটের মধ্যে তাদের জালে দুবার বল পাঠায় ইন্টার! 

অমন নাটকীয় শুরুর পর শেষ পর্যন্ত ম্যাচে আর কোনো গোল হয়নি। ইন্টার জিতে যায় ওই ২-০ গোলেই। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় এসি মিলানের বিপক্ষে তাদের প্রথম জয় এটি। 

ম্যাচের পর দলের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করলেন ইনজাগি। তবে ইন্টার কোচ আফসোসও করলেন প্রথমার্ধে আরও গোল করতে না পারায়। 

“ছেলেরা তাদের মন উজার করে আর মাথা দিয়ে খেলেছে। মাঠের সবটুকু অংশে তাদের বিচরণ ছিল। আমরা খুবই খুশি। তবে তারপরও মনে হয়, সামান্য কিছু ঘাটতি ছিল।” 

“প্রথমার্ধে অসাধারণ খেলেছি আমরা, অনেক সুযোগ তৈরি করেছি। কিন্তু যতটা সুযোগ পেয়েছি, স্কোরলাইনে সেটির প্রতিফলন পড়েনি। আরও গোল করা উচিত ছিল আমাদের।” 

২০১০ সালে ইন্টার মিলানের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ই ইতালির কোনো দলের সবশেষ ইউরোপ সেরা হওয়ার অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিনের খরা পূরণের পথে তারা এগিয়ে গেছে আরেক ধাপ। এবার দ্বিতীয় লেগের লড়াই আগামী মঙ্গলবার, যেটি হবে ইন্টারের ‘হোম’ ম্যাচ। তাদের সমর্থক থাকবে বেশি। 

তবে ডার্বির মতো চাপের ম্যাচে কাজটি সহজ হবে না বলেই মনে করেন ইনজাগি। ইন্টার কোচের আশা, প্রথম লেগের পারফরম্যান্সকে পরের লেগে বয়ে নেওয়া। 

“ডার্বি ম্যাচের চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে ছেলেরা আজকে দারুণ ছিল। আমাদের এটা ধরে রাখতে হবে। আমরা জানি যে স্বপ্নের মঞ্চ থেকে স্রেফ একধাপ দূরে আছি আমরা। তবে গত অগাস্ট থেকে আজকে পর্যন্ত বিশ্বাসের ভেলায় আমরা এগিয়ে গেছি।” 

“ডার্বি ম্যাচ, আবারও চাপ থাকবে প্রবল। তবে ছেলেরা জানে, কী করতে হবে। খুব বেশি চিন্তা না করে নিজেদের কাজ করে যেতে হবে, নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে এবং মাঠে নিজেদের মান মেলে ধরতে হবে।” 

ম্যাচের আগে ইন্টারের একাদশ নিয়ে বড় কৌতূহল ছিল, লাউতারো মার্তিনেসের সঙ্গে আক্রমণভাগে কাকে রাখবেন কোচ- এদিন জেকো নাকি রোমেলু লুকাকু। পারিপার্শ্বিকতা বেশি পক্ষে ছিল লুকাকুর। জেকোর সময় ভালো যাচ্ছিল না খুব একটা। কিন্তু ইনজাগি শেষ পর্যন্ত ভরসা রাখেন জেকোর অভিজ্ঞতায়। বসনিয়ান এই ফরোয়ার্ডই দারুণ ভলিতে গোল করে মিলানকে এগিয়ে দেন অষ্টম মিনিটে। 

৩৭ বছর ৫৪ দিন বয়সে গোল করে তিনি নাম লেখান রেকর্ড বইয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে তার চেয়ে বেশি বয়সে গোল আছে কেবল রায়ান গিগসের। 

ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত জেকো বলেন, দুঃসময় পেরিয়ে গোলের দেখা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। 

“কখনও কখনও এমন সময় আসে, যখন কোনোভাবেই বল জালে ঢোকে না, গোল পাওয়া যায় না। তবে ধৈর্য রাখতে হয়, কঠোর পরিশ্রমের ফল মেলেই। আমি শান্তই ছিলাম, জানতাম যে সবসময়ের মতো গোল আসবেই।” 

“ভালো লাগছে, খুবই ভালো লাগছে। বিশেষ করে ডার্বি ম্যাচে এটা করে বেশি ভালো লাগছে। কাগজে-কলমে আমরা প্রতিপক্ষের মাঠে খেলেছি এটি। আমাদের জন্য দারুণ ফল।”