ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
দুই দলের সামনেই সুযোগ ছিল ইউরোর নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার, পারল না কেউই।
Published : 22 Jun 2024, 02:59 AM
প্রথম ১৫ মিনিটে তিনটি, দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি- গোলের পরিষ্কার চারটি সুযোগ হেলায় হারালেন অঁতোয়ান গ্রিজমান। তার সতীর্থরাও পারল না ফিনিশিংয়ের মলিনতা ঝেড়ে ফেলতে। উল্টো দ্বিতীয়ার্ধে চাপের মুখে জালে বল পাঠিয়ে উল্লাস শুরু করে নেদারল্যান্ডস। সেটাও বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বাতিল হয়ে যায়। তাতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের হাইভোল্টেজ ম্যাচটি শেষ হয় সমতায়।
লাইপজিগে শুক্রবার রাতে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। এবারের ইউরোয় এই প্রথম কোনো ম্যাচে গোলের দেখা মিলল না।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে নাক ভেঙে যাওয়ায় কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে শঙ্কা তো ছিলই। তারপরও দলের পক্ষ থেকে তাকে খেলানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়। ম্যাচের দিন বরং আলোচনা চলে, কী রঙের মাস্ক পরে খেলবেন তিনি। কিন্তু, পুরো ম্যাচই বেঞ্চে বসে কাটাতে হলো তাকে।
প্রথম ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষেও ফেভারিট ফ্রান্সের ফিনিশিংয়ে দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেদিন প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলে কোনোমতে জিতেছিল তারা। এবার গোলের জন্য প্রতিপক্ষের প্রায় দ্বিগুণ ১৫টি শট নিয়ে একটিও কাজে লাগাতে পারল না তারা।
আর পোল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে আসর শুরু করা নেদারল্যান্ডস প্রথমার্ধে সমানতালে লড়াই করলেও, পরের অর্ধে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে ছিল।
ম্যাচের প্রথম সুযোগটা অবশ্য নেদারল্যান্ডসই পায়। শুরুর বাঁশি বাজতেই আক্রমণ শাণায় তারা, ৫৭ সেকেন্ডে হতে পারত গোল; তবে সবাইকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে ইহেমি ফ্রিমপংয়ের নেওয়া কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক। তিন মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে দারুণ সুযোগ তৈরি করে ফ্রান্স, এবার বক্সের বাইরে থেকে অঁতোয়ান গ্রিজমানের বুলেট গতির শটে এক হাত দিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান বার্ট ভেরব্রুখেন।
ওই দুই আক্রমণে ধারণা মেলে লড়াইয়ে সম্ভাব্য গতি-প্রকৃতির। ম্যাচ এগোতেও থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে।
চতুদর্শ মিনিটে পরপর দুটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেন গ্রিজমান। প্রথমবার গোলমুখে শট নিতে পারতেন আদ্রিওঁ রাবিও, কিন্তু তিনি আরও নিশ্চিত হতেই পাশেই সতীর্থকে ছোট পাস দেন। সামনে ফাঁকা জাল, এমনকি নেই গোলরক্ষকও; কিন্তু বল ঠেলে দেওয়ার কাজটুকুও করতে পারলেন না গ্রিজমান! এরপর সতীর্থদের পা ঘুরে বল পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন তিনি।
দুই মিনিট পর ফরাসি শিবিরে ভীতি ছড়ান কোডি হাকপো। বক্সের বাইরে থেকে লিভারপুল ফরোয়ার্ডের নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে আটকান মাইক মিয়াঁ। কিছুক্ষণ পর তাদের আরেকটি ভালো আক্রমণ ফ্রান্সের রক্ষণে প্রতিহত হয়।
প্রথমার্ধে বল দখলে এগিয়ে থাকলেও গোলের জন্য শট নেওয়ায় দুই পক্ষই সমানে-সমান, পাঁচটি করে। শট লক্ষ্যে রাখায় ডাচরা অবশ্য একটু এগিয়ে ছিল, তিনটি।
বিরতির পর ফরাসিদের আক্রমণের ধার বাড়ে। গোলের উদ্দেশ্যে প্রথম ১৫ মিনিটে আরও পাঁচটি শট নেয় তারা, কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেনি একটিও।
চাপ ধরে রেখে ৬২তম মিনিটে আবারও ভীতি ছড়ায় দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এবার অহেলিয়া চুয়ামেনির হেড ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। খানিক পর আবারও একরাশ হতাশা উপহার দেন গ্রিজমান; এনগোলো কঁতের পাস দূরের পোস্টে পেয়ে আবারও ঠিকমতো শট নিতে পারলেন না তিনি, দুর্বল প্রচেষ্টা গোলরক্ষকের গায়ে লেগে বেরিয়ে গেল।
প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণে তখন নাজেহাল অবস্থা ডাচদের। এর মাঝেই পাল্টা আক্রমণে মেমফিস ডিপাইয়ের শট মিয়াঁ ঠেকানোর পর আলগা বল পেয়ে জোরাল শটে জালে জড়ান চাভি সাইমন্স। উল্লাসে ফেটে পড়ে ডাচ শিবির, সঙ্গে কমলা রঙের গ্যালারি।
কিন্তু, তাদের উদযাপন থেমে যায় লাইন্সম্যান পতাকা উঁচিয়ে ধরায়। লাইন্সম্যানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনাও করতে দেখা যায় রেফারিকে। বল জালে জড়ানোর সময় গোলরক্ষকের ঠিক পাশে দাঁড়ানো ছিলেন ডেনজেল ডামফ্রিস। ভিএআরও দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে জানায়, গোল নয়।
৭৫তম মিনিটে মার্কাস থুরামকে তুলে অভিজ্ঞ অলিভিয়ে জিরুকে নামান ফ্রান্স কোচ। তিনিও পারেননি উল্লেখযোগ্য কিছু করতে, ফ্রান্সও পারেনি গোল খরা কাটাতে।
সব মিলিয়ে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে নিজেরা গোল করতে ব্যর্থ হলো সবশেষ ২০০০ আসরে ইউরো জয়ীরা।
দুই দলের সামনেই সুযোগ ছিল শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত করার, পারল না কেউই। দুই রাউন্ড শেষে একটি করে জয় ও ড্রয়ে সমান ৪ পয়েন্ট ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের। ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে অষ্ট্রিয়া। পোলিশরা এখনও পারেনি পয়েন্টের খাতা খুলতে।
গ্রুপের শেষ রাউন্ডে আগামী মঙ্গলবার একই সময়ে মাঠে নামবে দুই দল, ফ্রান্স খেলবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে আর নেদারল্যান্ডস লড়বে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে।