উয়েফা নেশন্স লিগ
ম্যাচের আগের দিন ৩১ বছর বয়সে মারা যান গ্রিসের ডিফেন্ডার জর্জ বলডক, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েম্বলিতে অবিস্মরণীয় জয়টি তাকেই উৎসর্গ করেন গ্রিসের ফুটবলাররা।
Published : 11 Oct 2024, 12:11 PM
গ্রিসের ফুটবল ইতিহাসের স্মরণীয় জয়গুলির একটি। সেটিও ধরা দিল রোমাঞ্চ-উত্তেজনার দোলায় ভাসিয়ে। তারপরও ম্যাচ শেষে বাঁধনহারা উদযাপন দেখা গেল না তাদের। উল্লাসে মেতে উঠলেন না কেউ। আগের দিন এক সতীর্থকে অকালে হারানোর বেদনায় যে ভারাক্রান্ত গ্রিক ফুটবলারদের হৃদয়!
উয়েফা নেশন্স লিগের ম্যাচে বৃহস্পতিবার ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় গ্রিস।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে গোল করে গ্রিসকে এগিয়ে দেন ভাগ্যেলিস পাভলিদিস। ৮৭তম মিনিটে দর্শকদের উল্লাসে ভাসিয়ে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান জুড বেলিংহ্যাম। তবে ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ে সেই দর্শকদেরই স্তব্ধ করে আবার গোল করে দলকে জেতান পাভলিদিস।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ দেখায় গ্রিসের প্রথম জয় এটি। আগের ৯ ম্যাচের ৭টিতেই তারা স্বাদ পেয়েছিল পরাজয়ের। প্রথম জয়ের আনন্দ, সেটিও ওয়েম্বলির মতো ঐতিহাসিক আঙিনায়, গ্রিসের জন্য এটা বড় এক উপলক্ষ হওয়ার কথা। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেভাবে উদযাপন করতে দেখা যায়নি গ্রিকদের। ম্যাচের আগের দিন যে তারা হারিয়েছেন এক সতীর্থকে!
বুধবার রাতে এথেন্সের শহরতলি গ্লিফাদায় বাড়ির সুইমিং পুল থেকে ৩১ বছর বয়সী ডিফেন্ডার জর্জ বলডকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
বলডকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে। ফুটবলের শুরু ও পেশাদার ফুটবলে এগিয়ে চলা সেখানেই। নিচের স্তরের কয়েকটি ক্লাবে আট বছর খেলার পর ২০১৭ সালে শেফিল্ড ইউনাইটেডে নাম লেখান তিনি। এই ক্লাবের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্সও দেখান এই রাইট ব্যাক। শেফিল্ডের হয়ে তিন মৌসুম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও খেলেন তিনি। গত মে মাসে ইংলিশ ফুটবল ছেড়ে পাড়ি জমান গ্রিসের ক্লাব প্যানাথিনাইকসে।
বলডকের বাবা-মা ব্রিটিশ হলেও জাতীয় দলে খেলার জন্য তিনি বেছে নেন নানীর দেশ গ্রিসকে। আইনী জটিলতায় কয়েক বছর অপেক্ষার পর ২০২২ সালে গ্রিসের হয়ে অভিষেক হয় তার। গ্রিসের জার্সিতে খেলেছেন তিনি ১২টি ম্যাচ। সামনেও হয়তো দেখা যেত আরও অনেক ম্যাচে। কিন্তু ফুটবল ও জীবনের সীমানাই ছাড়িয়ে গেলেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় মাঠে। কালো ফিতা বেঁধে খেলতে নামেন গ্রিসের ফুটবলাররা। গোল করার পর পাভলিদিস চুম্বন এঁকে দেন সেই কালো ফিতায়।
ম্যাচের পর গ্রিসের গোটা দল মিলে বলডকের একটি জার্সি মেলে ধরে জানিয়ে দেন নিজেদের অনুভূতি। জয়ের নায়ক পাভলিদিস আবেগময় প্রতিক্রিয়া জানান ম্যাচ শেষে।
“আমাদের জন্য স্পেশাল একটি দিন ও ম্যাচ ছিল এটি। জর্জকে (বলডক) আমরা স্মরণ করছি। আমরা পেশাদার ফুটবলার এবং ম্যাচটি খেলতেই হতো। তবে ওর জন্য আজকে আমরা আমাদের হৃদয় দিয়ে খেলেছি।”
এমন ঐতিহাসিক জয় বা ফুটবলীয় আলোচনাতেই যেতে চাননি পাভলিদিস। বরং সতীর্থকে হারানোর যন্ত্রণার কথাই তুলে ধরেন এই ফরোয়ার্ড।
“আজকের দিনটি ফুটবল নিয়ে আলোচনার জন্য নয়। সে আমাদের দলের অংশ ছিল। তার অভাব আমরা অনুভব করছি।”
“তার পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানাতে চাই এবং ফুটবল নিয়ে কথা বলতে চাই না। গোটা দিনই আমরা আসলে একরকম অসাড় ছিলাম। আজকে আমরা জিতেছি, তবে উদযাপন করতে চাই না। কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না আসলে।”
গ্রিসের কোচ ইভান ইয়ানোভিচ বললেন, বলডকের এমন বিদায়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করে মাঠে নেমেছিল তার দল।
“এই ধরনের পরিস্থিতিতে ফুটবল আসলে মুখ্য নয়। যে সময়টা দলের সঙ্গে ছিল সে (বলডক), নিজের ছাপ রাখতে পেরেছে এবং আজকে দল যেভাবে খেলেছে, সেখানেই তা ফুটে উঠেছে।”