পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে যেতে উন্মুখ হয়ে আছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
Published : 09 Sep 2022, 08:31 PM
প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই উঁকি দিচ্ছে চার বছর আগের স্মৃতি। মেয়েদের মনে গুনগুনিয়ে বাজছে সেই ১৭-০ গোলের জয়ের গান। যদিও ম্যাচটি ছিল ২০১৮ সালে, ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের। এবারের লড়াই মূল সাফে, পাকিস্তানের জাতীয় দলের বিপক্ষে। কিন্তু চার বছর আগের সুখস্মৃতি যেন এ ম্যাচেও বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনার সুর বেঁধে দিচ্ছে।
নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে শনিবার স্থানীয় সময় বেলা একটায় মুখোমুখি হবে দুই দল।
এবারে আসরে দুই দলের শুরুটা হয়েছে দুই রকম। মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পথচলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তান হোঁচট খেয়েছে শুরুতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে তারা হেরেছে ৩-০ গোলে।
সেমি-ফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে পাকিস্তানকেই ‘টার্গেট’ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু লক্ষ্য পূরণের প্রস্তুতি নিয়ে কিছুটা হলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কাঠমান্ডু শহরেই পাহাড়ের কোলঘেঁষা আর্মড পুলিশ ফোর্স স্টেডিয়ামের নান্দনিক মাঠটির গত দুদিনের বৃষ্টিতে যা-তা অবস্থা। বাংলাদেশের প্রস্তুতি শুরুর আগেও বৃষ্টি হয়েছে। মাঠের বাইরে পানি, মূল মাঠেও কোথাও কোথায় পানি জমে থাকায় অনুশীলনের জন্য খুব একটা উপযোগী ছিল না। কর্দমাক্ত মাঠে মাঝেমধ্যে পিছলে পড়ে যেতে দেখা যায় মেয়েদের।
প্রস্তুতিতে কাঁদায় মাখামাখি অবস্থা হলেও লক্ষ্য নিয়ে কথা বলার সময় কোচ, খেলোয়াড় সবার চোখে-মুখে দেখা গেল আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ। ঘুরে ফিরে এলো ভুটানের চ্যাংলিমিথাংয়ে পাকিস্তানকে গোলের মালা পরানোর সেই স্মৃতি। ওই ম্যাচে ৭ গোল করা সিরাত জাহান স্বপ্না ক্ষণ গুনছেন আবারও গোল উৎসবে মেতে ওঠার।
“কালকে অবশ্যই ভালো কিছুর করার ইচ্ছা আছে। আগের ওই ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ ভালো কিছু করব। যেহেতু পাকিস্তানের বিপক্ষে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ফিনিশিংয়ে ভালো কিছু করেছি, এবার যেহেতু পাকিস্তানের সিনিয়র টিমের বিপক্ষে ম্যাচ, অবশ্যই আমার টার্গেট থাকবে ভালো কিছু করার।”
“আমরা পাকিস্তানের খেলা যতটুকু দেখেছি, ওরা মোটামুটি খেলতে পারে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ওরা মোটামুটি কিছুটা আক্রমণও করেছে। তবে আমরা আমাদের স্বাভাবিক যে খেলা, সেটাই খেলব। মালদ্বীপের বিপক্ষে আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছি, সেগুলো যদি কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে গোলসংখ্যা আরও বাড়ত। ফিনিশিং নিয়ে আমরা কথা বলেছি, কাজ করেছি, কাল ফিনিশিংয়ে আমাদের আরও ভালো করার ইচ্ছা। ভালো একটা ফল পাওয়ার ইচ্ছা আমাদের।”
ভুটানের সেই ম্যাচের সাত গোলস্কোরার আছেন বর্তমান বাংলাদেশ দলে। সেবার একটি গোল করা আঁখি এবার পাকিস্তান দলকে শুরুতে একটু পর্যবেক্ষণ করতে চান। ১৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার প্রয়োজন বুঝে শাণাতে চান আক্রমণও।
“আগে আমরা ওদের খেলা পাঁচ মিনিট দেখব, পরিস্থিতি বুঝব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব আমরা কী করব। আগে বয়সভিত্তিকে ওদের বিপক্ষে খেলেছিলাম, ১৭ গোল দিয়েছিলাম। এবারও আমরা ওদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার চেষ্টা করব।”
মারিয়া মান্দা-মনিকা চাকমার সঙ্গে মাঝমাঠ সামলানোর দায়িত্ব সানজিদা খাতুনের। তিনি অবশ্য পাকিস্তান দলকে সমীহ করলেন কিছুটা।
“অনূর্ধ্ব-১৮-এ ওদের ১৭টা গোল দিয়েছি। কিন্তু এটা ওদের সিনিয়র টিম। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে, ওরাও ভালো খেলবে। ভারতের বিপক্ষে ওদের ম্যাচটা আমরা দেখেছি, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।”
মেয়েদের নিয়ে আস্থার একবিন্দু কমতিও নেই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের উচ্চতা, দুই প্রবাসী মারিয়া জামিল খান ও নাদিয়া খানকে নিয়েও বিশেষ ভাবনা নেই তার। সাফ মিশনে আসার আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারায় যে শঙ্কাটুকু জন্মেছিল মনে, তাও মালদ্বীপ ম্যাচে দূর হয়ে গেছে বলে জানালেন তিনি।
“আমাদের মেয়েরা খেলার মধ্যে আছে, সেটার প্রমাণ তারা গত ম্যাচেই দিয়েছে। এই টুর্নামেন্টে খেলতে আসার আগে দুবাইয়ের বিপক্ষে আমাদের প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, সেটা খেলতে না পারার কারণে একটা সংশয় ছিল। তবে সে শঙ্কা কিন্তু মেয়েরা (মালদ্বীপ ম্যাচে) পুরোপুরি দূর করে দিয়েছে। ৯০ মিনিটই মেয়েরা খেলার মধ্যে ছিল এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছিল। আগামী ম্যাচেও তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলবে, তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলবে।”
“পাকিস্তানের খেলা দেখেছি, সেটা আমরা বিশ্লেষণ করেছি, সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়েছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়েরা কাল খেলবে। ২০১৮ সালের ম্যাচের পর মাঝে তিন-চারটা বছর চলে গেছে, আমাদের মেয়েরা আরও পরিণত হয়েছে এবং সেটার ছাপ তাদের খেলার মধ্যে সবসময় দেখা যাচ্ছে। তার প্রতিফলন আশা করি কাল মাঠে দেখা পড়বে।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১০ এসএ গেমসে দল জিতেছিল ১-০ গোলে। এবার জিতলে সেরা চারের মঞ্চে ওঠার পথ আরও মসৃণ হবে বাংলাদেশের। তবে গ্রুপ সেরা হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে গোল পার্থক্য। এ দুটি দিক মাথায় রেখে ছক কষছেন ছোটন।
“ফিনিশিং নিয়ে টিম মিটিংয়ে কথা হয়েছে। মাঠেও কাজ করা হয়েছে। আশা করি, কাল আমাদের সামনে গোলের সুযোগ আসবে এবং সেটা কাজে লাগাতে হবে। ইনশাল্লাহ জয় নিয়েই আমরা মাঠ ছাড়ব। যদি আমরা এই টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে চাই, তাহলে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।”
পাকিস্তানের কাছে কী জরুরি, তা অবশ্য জানা যায়নি! একই মাঠে শনিবার অনুশীলন করল তারা। কিন্তু গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাই বলতে রাজি হননি পাকিস্তান কোচ, খেলোয়াড়দের কেউই।