সিলেটে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে প্রার্থীদের পিভিসি ও লেমিনেটেড পোস্টার

একাধিক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে পোস্টার বাঁচাতেই লেমিনেটিংয়ের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

বাপ্পা মৈত্রসিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2023, 04:11 AM
Updated : 9 June 2023, 04:11 AM

সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের নগরী সিলেট সেজে উঠেছে ব্যানার-ফেস্টুন আর পোস্টারে। তবে এক্ষেত্রে আইন অমান্যের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সব স্থানেই চোখে পড়ছে নির্বাচনী প্রচারের এসব সামগ্রী। তবে কোথাও কোথাও কাগজের বদলে দেখা মিলছে পলি ভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি প্রিন্ট পোস্টার।

যদিও পিভিসি বা লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো ও প্রদর্শনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যা মানছেন না সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা। ফলে হুমকিতে পড়ছে নগরীর পরিবেশ।

২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে এক আইনজীবীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত রায় দেয় আদালত। সেখানে যে কোনো নির্বাচনী প্রচারে লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সঙ্গে সারাদেশে লেমিনেটেড পোস্টার তৈরি ও প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়।

তবে চলতি সপ্তাহের সোম থেকে বৃহস্পতিবার নগরীর কালীবাড়ি, মাদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, রিকাবিবাজার, মেডিকেল রোড, লামাবাজার, জাল্লারপাড়, জিন্দাবাজার পয়েন্ট, ধোপাদিঘীরপাড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকা জুড়ে রয়েছে থাকা পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনের বেশিরভাগই পলিথিন মোড়ানো।

বেশিরভাগ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পোস্টার পলিথিনে মুড়িয়ে টানানো হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পলিথিন মোড়ানো কাগজের পোস্টারের পাশাপাশি দেখা গেল পিভিসি প্রিন্ট পোস্টার।

একাধিক প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে পোস্টার বাঁচাতেই লেমিনেটিংয়ের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। সাধারণ পর্যায়ের এসব কর্মী-সমর্থকদের আদালদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো ধারণাও নেই।

পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাহমুদল হাসান বলেন, “আমাদের কিছু কর্মী না বুঝে এই কাজ করেছেন। আমরা পোস্টার থেকে পলিথিন সরিয়ে নিয়েছি; আর এ রকম হবে না।”

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

পরে তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মুক্তাদির আহমদ মুক্তা বলেন, “নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত না। কে বা কারা এসব কাজ করছে তা আমাদের জানা নেই। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কোনো পলিথিন মোড়ানো বা পিভিসির পোস্টার টাঙায়নি। বরং এভাবে পোস্টার লাগাতে নিষেধ করা আছে।”

অবশ্য নগরী ঘুরে কেবল জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলামেরই কোনো প্লাস্টিক মোড়ানো বা পিভিসি পোস্টার দেখা যায়নি।

এই নির্বাচনে দলটির প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীসহ ও অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘণ ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ আনেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, “নির্বাচনী প্রচারে পলিথিন মোড়ানো বা পিভিসি প্রিন্ট পোস্টার ব্যবহার করা আইনবিরোধী কাজ। এগুলো পচনশীল না হওয়ায় পবিবেশ দূষণ ও নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।”

এরই মধ্যে পলিথিন মোড়ানো ও পিভিসি পোস্টার অপসারণে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ।

তিনি বলেন, “নির্বাচনি প্রচারে পিভিসি বা পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার লাগানো যাবে না। এটি নির্বাচন কমিশনের আইনবিরোধী কাজ। আবারও অভিযান চালিয়ে বিদ্যমান পোস্টার অপসারণ করা হবে।”

তবে আইনবিরোধী এ কাজের দায়ে এখনো কোনো প্রার্থীকে জরিমানা করা বা কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়নি কমিশন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ও পরিবেশ দূষণের এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়।

কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন এ বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। গত ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে অংশ নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

এরপর ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি।