সম্মেলন: কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে জল্পনা

নতুন মুখ হিসেবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 11:53 AM
Updated : 7 Dec 2022, 11:53 AM

প্রায় ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে; আর জল্পনা রয়েছে নেতৃত্ব নিয়ে।

বৃহস্পতিবারের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন। যদিও সবাই বলছেন, দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে দেখার বিষয়, সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসবে নাকি পুরানোদের ওপরই আস্থা রাখবে দল।  

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের তিনটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১০টি নিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ইউনিট।

এগুলো হচ্ছে- কুমিল্লা আদর্শ সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, বরুড়া, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, লালমাই ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা। কমিটির প্রধান কার্যালয় কুমিল্লা মহানগরীতেই অবস্থিত।  

বাকি সাত উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা কমিটি এবং কুমিল্লা মহানগর কমিটি রয়েছে।

২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সভাপতি এবং সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত তারা যথাক্রমে আহ্বায়ক ও যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন।

সম্মেলনের পর ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে পরবর্তীতে আরও চারজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় কমিটির সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫।

তিন বছরের বেশি সময় আগে মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। আর একজন অব্যাহতি নিয়েছেন এবং ১২ জন বিদেশে অসুস্থ ও নিষ্ক্রিয় আছেন। অপর ৫১ জনের মধ্যে অনেকেই জেলার কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না বলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ জেলার অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছিল। তবে সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীরা উজ্জ্বীবিত। কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব আসছে। তারাও দলকে গতিশীল করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন।  

নেতারা জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভা আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ কুমিল্লার পাঁচ উপজেলা ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়।

ওইদিন সাংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে একই দিন বিএনপির কুমিল্লায় গণসমাবেশ থাকায় সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ। পরে

৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়।

বর্তমান সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্বাচনী এলাকা লালমাই উপজেলার বাগমরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে ঘিরে এরই মধ্যে সেখানে শুরু হয়েছে মঞ্চ বানানোর কাজ। নেতাদের পক্ষে কর্মী-সমর্থকদের পোস্টার ও ব্যানারে চেয়ে গেছে পুরো বাগমারা বাজার এলাকা। সেখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।   

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রূপম মজুমদার জানান, সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এবং সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হকের পরিচালনায় সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

নেতাকর্মীরা জানান, এবারের সম্মেলনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম মূল নেতৃত্বের একটিতে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি বর্তমান কমিটির সহসভাপতি।

সাধারণ সম্পাদক পদে মুজিবুল হকের বাইরে নতুন মুখ হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুছ ছালাম বেগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা সৌরভের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনো নেতাই নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাননি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আশা করছি একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠান হবে। এতে দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীসহ কুমিল্লার মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটুক।”

“আর পদ-পদবী নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত।”

এরই মধ্যে কয়েক দফা সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল হক।

সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সম্মেলন সফল করতে সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সম্মেলনে কাউন্সিলররা আগের কমিটির ওপর আস্থা রাখবে বলে আমি মনে করি। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, সেটা কেবল প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই জানেন।”

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকা আবদুছ ছালাম বেগ বলেন, “এবারের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসবে নাকি আগের নেতৃত্ব বহাল থাকবে সেই সিদ্ধান্ত কেবল শেখ হাসিনাই নেবেন।”

“নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। যদি নেত্রী এবং দল আমাকে দায়িত্ব দেয়, তাহলে আমি তৃণমূলে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করবো।”