তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকের ‘নাভিশ্বাস’

বিঘাপ্রতি জমি চাষ করতে ৩০০ টাকা বেশি দিচ্ছেন কৃষকরা।

আফতাবুজ্জামান হিরুরংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 06:58 AM
Updated : 8 August 2022, 06:58 AM

জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের খরচও বেড়ে গেছে। এক বিঘা জমিতে হালচাষ করতে আগে ৫০০ টাকা লাগলেও এখন তা বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরের কৃষকরা বলছেন, এমনিতেই মূলধনের সংকট, তার ওপর হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এত বেশি বাড়ার ধাক্কা তাদের জন্য সামলানো কষ্টকর।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে দাম বাড়ানোয় কি ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে, তা উল্লেখ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে এর সমালোচনা করলেও অনেকে আবার বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছেন।

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকার কৃষক জাহেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন বিঘাপ্রতি জমি চাষ করতে ৩০০ টাকা বেশি দিতে হবে বলে ট্রাক্টরের মালিক জানিয়ে দিয়েছে। মাহেন্দ্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে আগে হালচাষ দিতে ৫০০ টাকা নিলেও এখন বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

“আমার ৫ বিঘা জমি চাষ করতে অতিরিক্ত প্রায় ২ হাজার টাকা জোগাড় করতে হবে। হঠাৎ করে এই বাড়তি টাকা জোগাড় করা কষ্টকর।”

তেলের দাম বাড়ার আগে নগরীর বাহার কাচনা এলাকার কৃষক হারুন মিয়ার শ্যালো মেশিনে জমিতে এক ঘণ্টা সেচ দিতে ১০০ টাকা লাগতো। এখন খরচ বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। এই দাম বাড়ার বড় একটা প্রভাব নিশ্চিতভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

হারুন বলেন, “আমাদের কৃষকদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তারপর উপর আবার তেলের দাম বাড়লো।”

চওড়ার হাট এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “এই যে তেলার দাম বাড়লো, আমরা কি আর শ্যালো মেশিন দিয়ে আবাদ করতে পারবো?। যেখানে এক ঘন্টায় ১০০ টাকা দিতাম সেখান এখন ১৫০ টাকা লাগছে। তাইলে কন এ্যালো কি হইবে হামার কৃষকদের অবস্থা।”

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রোকনুজ্জামান বলেন, “তেলের দাম বাড়লেও আমন মৌসুমে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ এ সময় সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বোরো মৌসুমে সেচে খরচ বাড়বে।”

এদিকে সোমবার সকালে নগরীর কাঁচাবাজার ঘুরে সব জিনিসের দাম বাড়তি দেখা গেছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে রাতারাতি সব রকমের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে চাওয়া হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।

রংপুর পৌরবাজারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয় লালবাগ এলাকার গৃহিনী মমতাজ বেগমের সঙ্গে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “আমাদের তো আর তেমন ইনকাম নাই যে, তেলের দাম বাড়লে হামার কোনো সমস্যা নাই। তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে জিনিসের দাম বাড়ছে ভাই।”

“একদিনেই ৩৮ টাকার ডিম ৪০ টাকা হয়ে গেছে। তাছাড়া সব সবজির দাম বাড়ছে একদিনোতেই।”

এদিকে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রংপুরে বাইসাইকেল বিক্রি বেড়েছে। শনিবার নগরীর বাইসাইকেলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে।

বাইসাইলে কিনতে আসা আতিকুর রহমান মুরাদের জানালেন, তার মোটরসাইকেল থাকলেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এখন থেকে তা আর ব্যবহার করবেন না। মোটরসাইকেলের বিকল্প হিসেবে বাইসাইকেল কিনতে এসেছেন।

আরেক বাইসাইকেল ক্রেতা শাহরিয়ার আলামিন বলেন, “মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তুতি থাকলেও এখন সিদ্ধান্ত বদলে বাইসাইকেল কিনতে এসেছি। তেলের দাম যে হারে বেড়েছে, কি করে মোটর সাইকেল চালাবো?”

তবে বাইসাইকেলের দামও আগের তুলনায় বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। শরীফ রিয়াদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “ক্রেতারা আসছেন, কিন্তু দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। গত দুই মাসে প্রতিটি সাইকেলের দাম পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা বেড়েছে।”

দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে সবার অবস্থা যেখানে বেকায়দা, তখন এ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন নগরীর রাধাবল্লোভ এলাকার জাসেম হোসেন বিন জুম্মন।

তিনি বলেন, “বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে সরকার দাম বাড়নোর যে সিন্ধান্ত নিয়েছে, ঠিকই আছে বলে আমি মনে করি।”