বিস্ফোরণের পর বয়লারটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে রোদে বসে থাকা সাগর দাসের পরিবারের ওপর গিয়ে পড়ে।
Published : 04 Jan 2024, 12:26 PM
ঠাকুরগাঁওয়ে সদর উপজেলায় চালকলের বয়লার বিস্ফোরণে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিথুন সরকার।
নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের গৃহবধূ দীপ্তি রাণী দাস (৪৫), তার মেয়ে পূজা দাস (৮) ও ভাতিজা পলক দাস (৯)। আহত হয়েছেন দীপ্তি রাণী দাসের স্বামী সাগর দাস (৫০) ও স্থানীয় বাসিন্দা নিখিল (৪০)।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন বলেন, সাগর দাসের পরিবারের সদস্যরা সকালে বাড়ির সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের বাড়ির পাশের সাইদুলের চালকলের বয়লারে ধান সেদ্ধ করা হচ্ছিল।
সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করে মিলের বয়লারে বিস্ফোরণ হয়। এতে বয়লারটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে রোদে বসে থাকা সাগর দাসের পরিবারের ওপর গিয়ে পড়ে।
“উত্তপ্ত বয়লারের আঘাতে কয়েক গজ দূরে ছিটকে পড়ে ও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ঘটনাস্থলেই দীপ্তি রাণী, তার মেয়ে পূজা ও ভাতিজা পলকের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হন সাগর দাস ও নিখিল। ”
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
একই এলাকার বাসিন্দা খয়রুল ইসলাম বলেন, “সাইদুলের হাস্কিং মিলটির ছাই আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে; তাই স্থানীয়রা সেটি বন্ধ করার জন্য সাইদুলকে একাধিকবার বলেছে। কিন্তু সে ক্ষমতার জোরে সেটি চালু রেখেছে।
“আজকে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা হাস্কিং মিলের মালিক সাইদুলের বিচার দাবি করছি।”
নিহত পলক দাসের বাবা উমাকান্ত দাস অভিযোগ করে বলেন, “সাইদুলের হাস্কিং মিলে নানা ধরনের সমস্যা ছিল; আমরা বন্ধ রাখতে বলেছি, কিন্তু সে কথা শোনেনি।
“আজকে তার হাস্কিং মিলের বয়লারের আঘাতে আমার ছেলে, ভাইয়ের বউ ও তার মেয়ে নিহত হয়েছে। এই কষ্ট রাখার জায়গা নেই, ভাই। আমি সাইদুলের বিচার চাই।”
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। হাস্কিং মিলের ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের ত্রুটি রয়েছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিথুন সরকার বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে; সেই সঙ্গে মামলা দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা গহণ করা হবে।”
চালকলটির মালিক সাইদুলকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।