কনকনে ঠাণ্ডায় থরথর কাঁপছে ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 09:16 AM
Updated : 10 Jan 2023, 09:16 AM

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা; বাড়ছে শীতজনিত রোগ।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলায় সূর্যের দেখা মিললেও তাপ নেই বললেই চলে। সকাল ১০টায় থার্মোমিটারের পারদ নেমেছে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তাপমাত্রা ছিলো ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সোমবার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শুক্রবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো।

তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের তীব্রতা অনেক বেড়েছে; সপ্তাহখানেক ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। কখনো সূর্যের দেখা মিললেও তাপমাত্রা একদমই নেই। শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। কনকনে শীতের কারণে কৃষকরা মাঠে কাজ করতে পারছে না।”

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না; তাই রাস্তাঘাটও ফাঁকা। কনকনে শীতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। দিনের বেলায় সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে যানবাহন।

রাতে-দিনে শীত থেকে বাঁচতে খঁড়কুটো জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছেন অনেকে। অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। কাজকর্মে গতি কমে যাওয়ায় অনেকের রোজগারও কমে গেছে।

জেলা শহরের বেলতলা এলাকার রিকশাচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, “শীতের আগে ভোর বেলায় রিকশা নিয়ে বের হতাম আয়ের জন্য। আর এখন কনকনে ঠাণ্ডায় রিকশা বের করতেই পারছি না। তারপরও কষ্ট করে বের হলেও যাত্রী পাই না। ফলে আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে।”

সদরের নারগুন ইউনিয়নের কহরপাড়া গ্রাম থেকে আসা শহরের চৌরাস্তায় কাজের অপেক্ষায় থাকা দিনমজুর নজরুল ইসলাম বলেন, “গতবছর শীতের তীব্রতা কম ছিলো। কিন্তু এ বছর শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। চারদিন ধরে শহরে আসছি কাজের জন্য, কিন্তু কাজ পাচ্ছি না। এখন উপায় না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।”

শহরের ট্রাক চালক জয়নাল আবেদিন বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা এতই বেশি যে দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ শহরে বৃষ্টির মত করে কুয়াশা পড়ছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে।

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোচাবাড়ি এলাকার কৃষক মজিবর রহমান বলেন, “ধার দেনা করে ২০ কাঠা জমিত এইবার আলু আবাদ করিবা চাহিনু; কিন্তু হামার এততি হাড়কাঁপা ঠাণ্ডা পড়িছে। এইতে আলু লাগাবা পারুনা।”

শহরের বসিরপাড়া এলাকার সামসুল হক বলেন, “হিমালয়ের পাদদেশে ঠাকুরগাঁও জেলা হওয়ায় এ অঞ্চলে শীতের তীব্র অনেক বেশি থাকে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে শীত প্রচণ্ড বেশি। হিমেল হাওয়ায় এর তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে। কুয়াশা ঝরছে বৃষ্টির মত।

“কনকনে ঠাণ্ডায় থরথর করে কাঁপছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষজন। এতে করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।”

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ জামান জুয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসপাতালে শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৭ জন। বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ জনের মত।

“এছাড়াও গত এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে প্রায় এক হাজারের মত শিশু, বৃদ্ধসহ অন্যান্য বয়সী রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন।”

শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এ চিকিৎসক।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। ঠাকুরগাঁও জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

“কনকনে ঠাণ্ডায় সবচেয়ে কষ্টে আছে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষেরা। তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”

তিনি জানান, সরকারিভাবে ২৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন তারা। সেগুলো অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। আরও ৩০ হাজার কম্বল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।