ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ, স্বজনের দাবি হত্যা

উর্মিকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবার ও সহপাঠীদের ভাষ্য।

তুহিন আরণ্যমেহেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2022, 06:13 PM
Updated : 9 Sept 2022, 06:13 PM

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে শ্বশুরবাড়ি থেকে।

এ ঘটনায় তার বাবা হত্যা মামলা করার পর তার স্বামী ও শ্বশুরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, শুক্রবার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের কাথুলি মোড় এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে নিশাত তাসনীম উর্মির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত নিশাত তাসনীম উর্মি কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফকলোর স্টাডিজ বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন আশিকুজ্জমান প্রিন্সকে। প্রিন্স একই এলাকার শফিউল ইসলাম হাশেমের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। তাদের ১৩ মাস বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

উর্মির বাবা গোলাম কিবরিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বেয়াই [উর্মির শ্বশুর] শফিউল ইসলাম ফোন দিয়ে জানান উর্মি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

“খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে সেখানে উর্মির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। পরে বেয়াইয়ের কাছে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে বলেন – উর্মি ঘরের জানালার সঙ্গে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অথচ উর্মির শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।”

উর্মির শ্বশুর ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম হাশেম বলেন, “আমার ছেলে, নাতি ও বৌমা একঘরে ঘুমাচ্ছিল। হটাৎ নাতির কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। এই সময় ছেলে বৌমাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। তারপর ঘরের লাইট জ্বালিয়ে খোঁজাখুঁজি করে দেখি বৌমা পাশের ঘরের জানালার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে পড়ে আছে।”

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বৌমার আচরণ খুবই ভালো ছিল। ছেলের সাথেও সম্পর্ক ভালো ছিল। এমন ঘটনা ঘটার কথা না। তারপরও এই ঘটনায় ছেলে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে।”

গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, নিহতের বাবা বাদী হয়ে গাংনী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

“নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটা পরিষ্কার হবে।”

ওসি আরও জানান, উর্মির শ্বশুর ও স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নিহত হওয়ার পিছনের তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

উর্মির সহপাঠী এবং গাংনী চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জুবাইয়ের রহমান বলেন, “উর্মি সংস্কৃতিকমনা ও মুক্ত চিন্তার মেয়ে ছিল। প্রেম করে বিয়ের পর উর্মির মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হয়ত জানালার সাথে ফাঁস ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।”

‘উর্মির স্বামী উর্মির উপর নির্যাতন করত’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এমন কথা উর্মির বিভিন্ন সময়ের কথোপকথনে ইঙ্গিত পাওয়া যেত। নির্যাতনের পরও উর্মি স্বামীর মন জয় করতে সন্তান নিল। তারপরও স্বামীর মন পেল না উর্মি। অবশেষে উর্মিকে সেই শিশু সন্তানকে ফেলে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো।”

তিনি এটাকে ‘হত্যা’ উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকারীর শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে, উর্মির ‘হত্যার’ বিচার দাবিতে গাংনীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং তার সহপাঠীরা শুক্রবার বিকালে শহরের মানববন্ধন করেছেন।