টেকনাফ সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলির বিকট শব্দ

মিয়ানমারের আকাশে বিমানের চক্কর দিতে দেখা গেছে। সেসব বিমান থেকে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান জনপ্রতিনিধি।

টেকনাফ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2024, 10:22 AM
Updated : 1 March 2024, 10:22 AM

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আবারও গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এতে হ্নীলা ও শাহ পরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

তিন দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার ভোর থেকে উপজেলার হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলাবর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধিরা।

শুক্রবার সকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে সীমান্তের ওপারে গত কয়েক দিন কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। বৃহস্পতিবার থেকে আবারও বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।

“বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে শুরু হয় গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ। রাতেও শোনা যায় গোলাগুলির শব্দ। শুক্রবার সকাল দশটা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।”

এই ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, “এই সময় মিয়ানমারের বলিবাজার ও নাকপুরা পাড়ার দিকে আকাশে বিমানের চক্কর দিতে দেখা গেছে। সেসব বিমান থেকে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। তবে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ৪-৫ মাইল ভেতরে ঘটেছে বলে মনে হয়েছে।”

এছাড়া টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নাফ নদীর ওপারে অন্তত ২ থেকে ৩ কিলোমিটার ভিতরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার ও নাকপুরা এলাকা ঘিরে সরকারি বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির সংঘাত-সংঘর্ষ এখনো চলছে। এতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে এপারেও।

তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই সীমান্তে আর শব্দ শোনা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া জেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুক্রবার দুপুরের দিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে পরপর দুই-তিনটি ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। এতে বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় কোনো গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী জানান, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও যে কোনো অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের টহল জোরদার রয়েছে।”

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি।

সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের পরে সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী ও অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া গোলাগুলিতে আহত হন আরও নয়জন।

কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কয়েকটি এলাকায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে; যা পরদিন সকাল ৮টার পর থেকে আর শোনা যায়নি।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত আবারও থেমে থেমে হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলি ও বিকট শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।