কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভেসে আসছে শত শত মৃত জেলিফিশ।
কয়েকদিন ধরে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসা এসব মৃত জেলিফিশ বিষাক্ত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা পর্যটকদের এসব মৃত মাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে নিয়ে টুরিস্ট পুলিশ এসব মৃত জেলিফিশ সৈকতে মাটিচাপা দিয়ে রাখছে।
সৈকতের স্বেচ্ছাসেবী ও টুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে আসতে শুরু করে মৃত জেলিফিশ। তবে গত দুইদিন ধরে বেশি পরিমাণে ভেসে আসতে দেখা গেছে।
সৈকতের ডায়াবেটিক থেকে হিমছডি পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা মৃত জেলিফিশ পড়ে থাকতে দেখছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সাগর পাড়ে এতো বেশি জেলিফিশের মৃত্যু তারা এর আগে কখনও দেখেননি। আর এই সময়ে জেলিফিশ সৈকতে আসেও না।
কেন ভেসে আসছে এসব জেলিফিশ- জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ-উন-নবী বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই এসব জেলিফিশের ভেসে আসার খবর পাচ্ছি। সমুদ্রে টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা ও জাল ফেলা নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় হয়তো সমুদ্র শান্ত পেয়ে জেলিফিশের একটি দল এদিকে চলে আসে। এখন মাছ ধরা চলছে। এ কারণে হয়তো জেলেদের জালে বা নৌকায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তারা সৈকতের দিকে চলে আসছে।”
“জেলিফিশ পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। ফলে এগুলো এখানে যখন সৈকতের বালিয়াড়িতে উঠে পড়ছে তখন মারা যাচ্ছে। এটাই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। এসব মাছের মৃত্যুর আরও যদি কোনো কারণ থাকে, জানতে হলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে হবে।”
তবে এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দেন, “এসব জেলিফিশ যেন কেউ খালি হাতে না ধরে। বিশেষ করে পর্যটকরা। কারণ, এগুলো খুবই বিষাক্ত হয়। এতে হাতে বা শরীরের ক্ষতি হতে পারে। এসব থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।”
এদিকে সৈকতজুড়ে পড়ে থাকা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এসব মৃত জেলিফিশ পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীদের সহায়তায় সরানোর কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, “এগুলো মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু বুধবার থেকে এগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে। তারপর আমরা এটা নিয়ে সচেতন হয়েছি। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব জেলিফিশের কিছু প্রজাতি আছে যাদের সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে অ্যালার্জি বা বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে।”
“তারপর এগুলো দেখলেই পরিষ্কার করা হচ্ছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় এগুলো মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেও ২০টির মতো জেলিফিশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “এ নিয়ে পর্যটকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সৈকতের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব মৃত জেলিফিশ দেখা যাচ্ছে।”
ভেসে আসা জেলিফিশের নমুনা সংগ্রহ করেছেন সমুদ্র গবেষণা ইনিস্টিটউটের বিজ্ঞানীরা। মৃত্যুর কারণ জানতে যোগযোগ করা হলে কেউ এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। তবে তারা জানান, এসব জেলিফিশ মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
স্থানীয় একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের এক যুবক বলেন, “ভাটার সময় একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫টি জেলিফিশ ভাসতে দেখা যায়। ভাটার সময় এটা বেশি দেখা যায়। কয়েকদিন ধরেই এই জেলিফিশগুলো ভেসে আসছে।
“এ কারণে পর্যটকদের একটু সমস্যা হচ্ছে। গোসল করার সময় পর্যটকদের হয়তো শরীরের সংস্পর্শে আসছে। তখন তারা এসে বলছে, তাদের শরীর চুলকাচ্ছে। অনেক সময় চুলকাতে চুলকাতে হাতে ফোসকাও পড়ে যেতে পারে।”
দরিয়ানগর গ্রিন ভয়েসের আরেকজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, “গত আট থেকে ১০ দিন ধরে বেশি আসতাছে। এগুলো তো এখন আসার কথা না। শীতকালে বেশি আসে। কিন্তু এখন আসতাছে।
“কী কারণে আসছে সেটা তো আমি জানি না। জোয়ারের সময় সৈকতে উঠে পড়ে। পরে আর ভাটার সময় নামে না। মরে যায়। পর্যটকদের গায়ে লাগলে চুলকায়।”
একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, “নভেম্বর-ডিসেম্বরে অল্প পরিমাণে আসে। কিন্তু এখন তো বেশি আসতাছে।”
দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, “জেলিফিশ অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং বিষাক্ত। ধারণা করছি, জেলেদের নৌকায় বা কারেন্ট জালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভেসে ভেসে এগুলো সৈকতে চলে আসছে।”