নারায়ণগঞ্জে কারখানা চালু ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ

বৃহস্পতিবার বিকালে ‘বেআইনিভাবে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2024, 12:17 PM
Updated : 10 Feb 2024, 12:17 PM

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক নগরীতে ‘অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড’ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা।

শনিবার সকাল ৮টায় কাজে গিয়ে ক্রোনী গ্রুপের এ কারখানাটি বন্ধ দেখতে পেয়ে শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ করেন বলে শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানান।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে এ এইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন কারখানাটির ডাইং ও নিটিংসহ বিভিন্ন সেকশনে অন্তত সাত হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।

“এতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে সোমবার বেতন পরিশোধের পর কারখানা খুলে দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে সরে যান শ্রমিকরা।”

এর আগে ডিসেম্বরের আংশিক ও জানুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেন কারখানাটির শ্রমিকরা।

এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘বেআইনিভাবে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ছয় মাস ধরে বেতন পরিশোধ নিয়ে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। একত্রে পুরো মাসের বেতন না দিয়ে কিস্তিতে বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। বেতন না দিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড কারখানায় লোড-আনলোড শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ৩৬ বছর বয়সি আলহাজ।

সকালে আন্দোলন চলাকালে তিনি বলেন, “সকালে কারখানায় আইসা দেখি তালাবন্ধ। মালিক বেতন দিতে সময় নিক। কিন্তু কারখানা বন্ধ কইরা দিলে তো আমরা পথে বইসা যামু। আমরা খাইটা খাওয়া মানুষ। আমাদের বকেয়া দিয়া কারখানা খুলে দিক, এইটাই চাই।”

কারখানাটির সুইং বিভাগের শ্রমিক লিপি বেগম বলেন, “কয়মাস ধইরাই লেনদেন ক্লিয়ার করে না। আগে মাস শুরুর ৩ তারিখের মইধ্যে বেতন দিত। মাস শেষে বাড়িওয়ালা ঘরের সামনে বইসা থাকে। বেতন না দিলে ঘরভাড়া দিমু কেমনে আর হাটবাজারই বা করমু কী দিয়া। গতমাসেও বেতন পাইতে আন্দোলন করতে হইছে।”

ঘটনাস্থলে থাকা শিল্প পুলিশ-৪ এর নারায়ণগঞ্জ জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার গণেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, “বকেয়া বেতন পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

“কারখানার মালিকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করলে তিনি আগামী সোমবার বেতন দেবেন বলে জানিয়েছেন। একথা শ্রমিকদের জানালে তারা আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যান।”

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ‘অর্ডার কমে যাওয়ার’ কথা জানিয়ে ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ নামে কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদে পরদিন সকালে কারখানাটির কয়েকশ শ্রমিক ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন ফতুল্লার কুতুবপুর এলাকার রূপসী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক।

শ্রমিকরা জানান, নভেম্বরে বেতন না দিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। এরপর অস্থায়ীভাবে কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে কারখানার ভেতরে সীমিত আকারে কার্যক্রম চালালেও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছে না।

কারখানাটির শ্রমিকরা নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসের বেতন পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।

কারখানাটিতে অন্তত সাতশ শ্রমিক রয়েছে বলে জানান ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের জেলা কমিটির সভাপতি কবির হোসেন রাজু।

মানববন্ধনে তিনি বলেন, “রূপসী গার্মেন্টসের মালিক অবৈধভাবে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। মাঝে মাঝে কারখানা খুলে কয়েকজন শ্রমিককে ফোনে ডেকে প্রোডাকশনে ডিউটি করায় কিন্তু সরকার ঘোষিত মজুরি এই কারখানার মালিক দিচ্ছেন না।

“এই কারণে আমরা রাস্তায়। আমাদের ৩ মাসের বেতন পাওনা রয়েছে। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে কারখানা খুলে না দিলে এ আন্দোলন আরও তীব্র হবে।’

মানববন্ধন শেষে শ্রমিকরা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে মিছিল করেন।

আরও পড়ুন

Also Read: বকেয়া পরিশোধ ‘না করেই’ কারখানা বন্ধ ঘোষণা

Also Read: বকেয়া বেতন: নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক বিক্ষোভ