দাম চড়েছে গদখালীর ফুল বাজারে

সাংবাদিক দেখে তিনি রীতিমত ক্ষোভ ঝাড়লেন ঢাকার সাভার থেকে আসা ফুলের এক পাইকার।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2024, 03:30 PM
Updated : 11 Feb 2024, 03:30 PM

পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে যশোরের গদখালীর ফুলের বাজার চড়েছে।

দুদিন আগেও যে গোলাপ ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটি রোববার এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে।

দেশি জাতের পাশাপাশি সাদা রঙের চায়না গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।

শুধু গোলাপ নয়, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, ভুট্টা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ প্রায় সব ফুলের দামই প্রতিটিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

স্থানীয় ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, নিকট-অতীতে এমন দামে ফুল বিক্রির নজির নেই।

রোববার ভোরে গদখালীর ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে বাজারে পা ফেলার জায়গা নেই। বিশেষ করে, পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দুদিন আগে ফুলের মোকামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে এসে ফুলের চড়া দাম দেখে তারা রীতিমত হতবাক!

ঢাকার সাভার থেকে আসা ফুলের পাইকার জয়নাল হোসেন গদখালীতে এসেছেন ফুল কিনতে।

সাংবাদিক দেখে তিনি রীতিমত ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন ফুলের দাম নিয়ে।

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে ফুল কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। তবে এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেনি।”

তার দাবি, মাত্র দুদিন আগে তিনি যে গোলাপ ১৫ টাকা দরে কিনে নিয়ে গেছেন, সেই ফুল আজ (রোববার) ২৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। একইভাবে ২০-২৫ টাকার চায়না গোলাপ কিনতে  হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে।

এটিকে রীতিমত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে দাবি জয়নালের।

তবে জয়নালের এ দাবির বিষয়ে দ্বিমত গদখালীর ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী মঞ্জুর হোসেনের।

তিনি বলেন, “করোনার কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফুল চাষিদের শোচনীয় অবস্থা চলে আসছে। তারপর রাজনৈতিক অস্থিরতা তো ছিলই। কিন্তু এখন সব দিক অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন ব্যবসায়ীরা আসছেন, তেমনি ফুল বেচা-কেনাও বেড়েছে।”

ফুল চাষেও ব্যয় বেড়েছে দাবি করে মঞ্জুর বলেন, “তাছাড়া এ বছর সারাদেশে গোলাপ ফুলের ফলনও কম হয়েছে। বিশেষ দিনকে ঘিরে চাহিদা বেড়ে যাওয়া অথচ সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি হচ্ছে।”

তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, “গদখালীর বাজারে আজ (রোববার) জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা, রজনীগন্ধা ও ভুট্টা ১৫ টাকা, একশ পিস চন্দ্রমল্লিকা ৫০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রঙভেদে ২০-২৫ টাকা।”

গদখালী ফুলের বাজারের ইতিহাসে গোলাপের দাম এবারই সর্বোচ্চ বলে তিনি জানালেন।

এ ফুলচাষি চান, ভবিষ্যতেও যেন ফুলের দাম এমনই থাকে।

রফিকুল ইসলাম নামে আরেক ফুলচাষি বলেন, “ফুল চাষে অনেকদিন ধরে লাভের মুখ দেখছিলাম না। আল্লাহ এ বছর আমাদের দিকে নজর দিয়েছেন। এর আগে বিশেষ দিবসে ৫-১০ টাকাও দাম পাইনি গোলাপের। যেকারণে অনেকেই ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তবে এবার বাজার ভালো পেয়ে অনেকেই ফুলক্ষেত টিকিয়ে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

এ বছর ভাইরাসজনিত রোগের কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে দাবি করে রফিকুল বলেন, “এ অবস্থায় দাম না পেলে টিকে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না।”

আগামী দুদিনে আরও ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

এদিকে, গদখালীর ফুল ব্যবসায়ীদের নেতা আব্দুর রহিম বলেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণে গোলাপসহ প্রায় সব ধরনের ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা অনেকটা সন্দিহান ছিলাম ভালো দাম পাওয়া নিয়ে। তবে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দাম পেয়ে ফুল চাষিরা বেশ খুশি।”

বেশি দামে ফুল কিনে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “সারা দেশে ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম, চাহিদা দুই-ই রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে যেমন ফুল কিনছেন, তেমনি বেশি দামে বিক্রি করেও লাভবান হতে পারবেন।”