খুলনায় ভোটে আগ্রহী মঞ্জু, মনে করেন ‘মাঠ ছাড়া’ উচিত নয়

“গত সিটি নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তবে অনেকে মনে করেন, নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনে যাওয়া উচিত,” বললেন ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু।

শুভ্র শচীন, খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2023, 05:32 PM
Updated : 21 April 2023, 05:32 PM

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেককে ভোটে মোকাবিলায় আগ্রহী বিএনপির গতবারের পরাজিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং ২০১৩ সালে বিএনপির সমর্থনে জয়ী মনিরুজ্জামান মনি। তবে ভোটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা। 

২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকাকে মোকাবিলা করা বিএনপি নেতা মঞ্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে যে আমাদের আগ্রহ নেই, তা নয়। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই মানুষ ভোট দিতে পারেন না। 

“গত সিটি নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তবে অনেকে মনে করেন নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনে যাওয়া উচিত।” 

তাহলে কি ভোটে যাচ্ছেন? মঞ্জু বললেন, “দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যাব না। আমরা অপেক্ষা করছি, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিএনপি হয়ত একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” 

খুলনায় চার দশক ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসা মঞ্জু অবশ্য দলে অবস্থান হারিয়েছেন। গত সিটি নির্বাচনের তিন বছর পর ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর দলের শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

এরপর থেকে দলে কোণঠাসা তিনি ও তার অনুসারীরা। গত বছর ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলে সেখানেও মঞ্জুর পাশাপাশি রাখা হয়নি খুলনা সিটির প্রথম দুই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন পাওয়া মনিরুজ্জামান মনিকেও। 

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে দলে অবস্থান ফিরে পাওয়ার একটি সুযোগ হিসেবেও দেখছেন মঞ্জু। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা ঠিক, দল আমার ওপর অবিচার করেছে। অসম্মানজনক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। তবে দলের উচিত আমাদের দলে মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া। আমার বিশ্বাস দল আমাদের ওপর সুবিচার করবে।” 

২০০৮ সালে খালেকের কাছে হেরে যাওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়া নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিও আশা করছেন, দল নির্বাচনে গেলে তিনি মনোনয়ন পাবেন। 

তিনি বলেন, “দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা নেই। মানুষের মৌলিক অধিকারও খর্ব করা হচ্ছে। এসব নিয়ে বিএনপি আন্দোলনে রয়েছে। তবে দল আমার ওপর অবিচার করেছে। আশা করছি সুবিচার পাব।” 

বিএনপি যদি ভোটে যেতে না চায়, তাহলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোটে না যাওয়ার কথাও জানিয়ে রেখেছেন তিনি। 

জাতীয় নির্বাচনের আগে যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন হচ্ছে, তাতে খুলনায় ভোটের তারিখ ঠিক হয়েছে আগামী ১২ জুন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ১৬ মে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই করে ফেলেছে। টানা চতুর্থবারের মত মনোনয়ন পেয়েছেন গত তিনটি নির্বাচনে দুইবার বিজয়ী তালুকদার আবদুল খালেক। 

তবে বিএনপি ভোটে যেতে আগ্রহী নয়। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনে থাকা দলটি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে যেতেও চায় না। 

অবশ্য বিএনপির এই অবস্থানের মধ্যেও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছেন। নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার এবং কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কুর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারও ভোটে ছিলেন। সাক্কু ও কায়সারের মধ্যে ভোট ভাগাভাগির সুযোগ নিয়ে প্রথমবারের মত কুমিল্লায় মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। জিতেছেন আরফানুল হক রিফাত। 

বিএনপি ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগ মনে করে ‘স্বতন্ত্র পরিচয়ে’ দলটির প্রার্থী থাকবে। গত ১১ এপ্রিল ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক আলোচনায় বলেন, “ঘোমটা পরা প্রার্থী কিন্তু সিটি নির্বাচনেও থাকবে। সিলেটের আরিফ বর্তমান মেয়র অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই অন্যান্য সিটিতেও ঘোমটা পরা তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।” 

নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার মতো খুলনাতেও বিএনপির কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারেন কি না- এ প্রশ্নে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সরকারের অধীন আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। যদি কেউ যেতে চান, সেটা তার নিজস্ব বিষয়।”

ভোটের আমেজ নেই 

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও ঈদের আগে আগে খুলনায় ভোট নিয়ে আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। আওয়ামী লীগও এখনও এ নিয়ে তৎপর হয়নি। বিএনপিও এখন পর্যন্ত কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ফলে তাদের সমর্থকরাও অনেকটাই নিশ্চুপ। 

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর নির্বাচনী এলাকায় নানা আলোচনার জন্ম নেয়। তবে এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নগরে এখনও সেই পরিবেশ তৈরি হয়নি। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহও নেই।” 

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, “বিএনপি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না দিলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।” 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজির আহমেদ জানিয়েছেন, এবার খুলনায় ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৩১ জন। ২০১৮ সালের এই সংখ্যাটি ছিলেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছিলেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৩৬ জন। 

আগের ৩ নির্বাচনের হালচাল 

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয় ২০০৮ সালে। সে বছর বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনিকে ২৫ হাজার ৮৩৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক। 

খালেক ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮১২টি, আর মনির বাক্সে পড়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৭৬ ভোট। 

২০১৩ সালের ভোটে জয় পান মনি। তিনি তখন ভোট পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩টি। খালেক সে বছর পান এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট। 

২০১৮ সাল প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে হয় এই ভোট। নৌকা নিয়ে খালেক সেই নির্বাচনে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির মঞ্জু ধানের শীষ নিয়ে পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।