ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিজের কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে ওই গৃহবধূর কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি।
Published : 26 Jan 2024, 05:48 PM
এক নারীর কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠার পর রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ওই নারীর সঙ্গে ওসি মাহবুবুল আলমের কথোপকথনের একটি অডিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে রাতেই তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার আদেশ দেন পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান।
রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পর চারঘাট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
“রোববার তাকে পুলিশ লাইনসে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিজের কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে ওই গৃহবধূর কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। এরপর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ২৮ বছর বয়সী সাহারা বেগম। শনিবার তিনি রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে ওসির সঙ্গে কথোপকথনের ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডও তিনি দিয়েছেন।
সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন কালু। একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি কারাগারে আছেন।
সাহারা বেগম বলেন, “নির্বাচনের পর এলাকার মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা। এরপর আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
“সেই অভিযোগ করতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।”
ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডের শুরুতেই একজন পুরুষকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে’ মন্ত্রী তাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাটে ‘নিয়ে এসেছেন’। তিনি মন্ত্রীর কথা ছাড়া কারও কথা শোনেন না। সাহারা বেগমের ভাষ্য, সেটি ওসি মাহবুবুল আলমের কণ্ঠ।
কথোপকথনের এক পর্যায়ে ওই নারীকে তিনি বলেন, “এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে পাক্কা ১০ লাখ টাকার নিচে ছাড়াতে পারবেন না। এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা।
“আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। এখন কি কি জিনিস চাইছে,... ৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি স্যার, আমি চেষ্টা করব। এবং বলেছি যে, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।”
অডিওতে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, “মুক্তা (চারঘাটের ‘মাদক সম্রাট’ নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দিব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। বাইরে থেকে তোমরা ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে। ”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও ওসি মাহবুবুল আলম ধরেননি।
[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]