আটশর বেশি নারীকে বাইক চালানো শিখিয়েছেন হেনা

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নারীরা কেউ এসেছেন শাড়ি পরে, কেউ টি শার্ট-জিন্স, কেউ আবার পরেছেন সালোয়ার কামিজ।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 02:06 PM
Updated : 8 March 2024, 02:06 PM

তখনও আকাশে রোদের ঝলকানি। বরিশাল নগরীর বান্দ রোড বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বাইক চালিয়ে আসেন আজমেরী পারভীন। তার হাত শক্ত হ্যান্ডেলে। তিনি পেশায় শিক্ষিকা হলেও শুক্রবার তিনি পাঠদানের উদ্দেশ্যে নয়, এসেছেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রশিক্ষণ সেন্টারের শোভাযাত্রায় অংশ নিতে।

বাইকের চালকের আসনে থাকা বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের এ শিক্ষিকার পেছনে আসনে ছিল তার তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে আরশান। সে নগরীর সিস্টার ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

আজমেরীর মত আরও অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন নারী সেখানে জড়ো হন; পরে ১৫টি বাইক নিয়ে নগরীতে শোভাযাত্রা করেন তারা।

শোভাযাত্রাটি আয়োজন করে বরিশাল নগরীর ‘ড্রিম বাইকার্স সেন্টার’। শুক্রবার বিকাল ৫টায় বান্দ রোড বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শেষ হয় সিঅ্যান্ডবি রোডে গিয়ে।

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নারীরা কেউ এসেছেন শাড়ি পরে, কেউ টি শার্ট-জিন্স, কেউ আবার পরেছেন সালোয়ার কামিজ। পোশাক ভিন্ন হলেও সকলের ভাষ্য এক। তারা বলছেন, বরিশাল নগরীতে সিএনজি আর ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ছাড়া তেমন গণপরিবহন নেই। অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে ব্যয় যেমন আছে, তেমনি আছে অটোরিকশা চালকদের খারাপ আচরণ। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই ঘটছে অনভিপ্রেত ঘটনা।

এ থেকে মুক্তি পেতে অনেক নারী এখন বেছে নিচ্ছেন মোটরসাইকেল; কেউ আবার স্কুটি। তারা একে অন্যকে উৎসাহিত করছেন এ যান কিনতে।

শোভাযাত্রার আয়োজক ও প্রশিক্ষণ সেন্টারের প্রশিক্ষক হেনা শ্রাবণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিন। দিনটি উপলক্ষ্যে নারীদের নিয়ে একটি রাইড দিয়েছি। শোভাযাত্রার পরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান হবে।

তিনি ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান চালান। তার সেন্টার থেকে এখন পর্যন্ত আটশ’র বেশি নারীকে বাইক চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে হেনা জানান।

নারী হয়েও বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা কেমন? এ প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষিকা আজমেরী পারভীন বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষের এটা শেখা উচিত। কারণ, এ থেকে ভালো, স্বল্প ও সাশ্রয়ী কিছু হতে পারে না। এতে যেমন সময় বাঁচে, তেমনি গণপরিবহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না।”

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া বরিশাল সদর উপজেলার কড়াপুর এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত জাহান বলেন, ২০১৮ সাল থেকে বাইক চালাচ্ছেন। এটা শেখার পর থেকে নগরীর চৌমাথা এলাকার বাসা থেকে নিয়মিত বাইক চালিয়ে আসা-যাওয়া করেন। কর্মস্থল ছাড়াও ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আনা নেওয়ার কাজও বাইকের মাধ্যমে করেন।

“বাইক আমাকে স্বাচ্ছন্দ্য দিচ্ছে। সময় সেইভ করছে।” বলেন তিনি।

নগরীর সাগরদী এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শুভ্রাও তার মেয়েকে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাইক চালানো শিখলেও এখন তা প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে বলে জানান। বাইক চালানোর কারণে রিকশা বা সিএনজি চালিত অটোরিকশার ব্যয় এখন আর হয় না তার।

গত তিন বছর ধরে বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়া থেকে ঝালকাঠির ষাটপাকিয়া স্কুলে যাতায়াত করেন শিক্ষিকা তানিয়া তাসনিম। তাসনিম বলেন, “নারী হলেও বাইকে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারি; সময়ও কম লাগে। আগে বাসে যেতে খুব সমস্যা হতো। সেই রকমভাবে সিট পাওয়া যেত না। এখন ঝামেলাগুলো নেই।”

বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের সম্মানের ছাত্রী স্নেহা বলেন, “শখ থেকেই বাইক চালানো শিখেছিলাম। পরে দেখলাম, এটাতেই সুবিধা। সময় কম লাগে; যানজটে পড়লেও কাটিয়ে বের হওয়া যায়।”