ছাত্রলীগ নেতাকে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে পিটুনি

জেলা শহরের পিটিআই সড়কে খালার বাড়িতে মঙ্গলবার বিকালে তিনি হামলার শিকার হন।  

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 06:00 PM
Updated : 22 Nov 2022, 06:00 PM

‘কমিটি গঠনকে ঘিরে’ বিরোধের জেরে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে একই সংগঠনের একদল যুবক। 

মঙ্গলবার বিকালে জেলা শহরের পিটিআই সড়কে একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। 

খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে। 

এ ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ফেইসবুক লাইভে এসে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ তার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচার দাবি করেন এবং এই হামলার বিচার না পেলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান। 

দলের নেতা-কর্মীরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া শহর ও সরকারি কলেজসহ ছাত্রলীগের ৫টি ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনি পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন।   

যে বাড়িতে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন সেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরের দিকে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ খাওয়ার জন্য পিটিআই রোডে তার খালার বাসায় যান। খাওয়া শেষে তিনি ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় শহর ছাত্রলীগের ৪০ থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মী ওই বাসায় গিয়ে চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতে থাকেন। 

এ সময় চ্যালেঞ্জ বাসার শৌচাগারের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে উঠে টেনে হিঁচড়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। এরপর লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে সামনের সড়কে নিয়ে আসেন। এ সময় তারা নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। 

পিটিআই রোডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার সামনে নিয়ে এসেও পুলিশের সামনেই তাকে জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগের বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা। এমনকি পুলিশ ভ্যানে তোলার পরও তাকে মারপিট করা হয়। এ সময় পুলিশকে নীরব থাকতে দেখা গেছে। 

ঘটনার সময় জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিকে ছাত্রলীগ কর্মীদের নিবৃত করতে দেখা যায়। পরে চ্যালেঞ্জকে উদ্ধার করে পুলিশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। 

হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জকে নেওয়া হলে চিকিৎসা না নিয়েই তিনি চলে আসেন। এ সময় তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। 

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর অভিযোগ করে বলেন, পিটিআই রোডের একটি বাড়িতে মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকাবস্থায় স্থানীয় জনতা হাফিজকে আটক করে এবং গণধোলাই দেয়। 

তবে ওই বাড়ির বাসিন্দা এক নারী দাবী করেন, চ্যালেঞ্জ তাদের আত্মীয়। দুপুরের দিকে তিনি তাদের বাড়ি যান। খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের অনেক ছেলে-পেলে লাঠিসোঁটা হাতে বাসায় ঢুকে পড়ে। পরে তাকে টয়লেটের ফলস ছাদ থেকে নামিয়ে মারতে মারতে নিয়ে যায়। 

আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের অভিযোগ, কমিটি গঠন নিয়েই মূলত এই বিরোধের সূত্রপাত। তিনি ঢাকায় ছিলেন। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া এসেছেন। দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যান। সেখান থেকে বের হলে কয়েকজন যুবক তাকে রেকি করতে থাকে। সেখান থেকে পিটিআই রোডে তার খালার বাসায় যান। 

“সেখানে গিয়েই আমার উপর আক্রমণ করে জেলা ও শহর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী। তারা আমাকে বেদম মেরেছে। দল ক্ষমতায় থাকতে এই প্রতিদান পেলাম। আমি আমার নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি।” 

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ঘটনার বিস্তারিত কোনো কিছু এখনও জানি না।” 

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, “এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গুটিকয়েক নেতা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা অবশ্যই দুঃখজনক। কারা দলের মধ্যে ঢুকে এ সমস্ত কাজ করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ শহরের পিটিআই রোডে একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় কতিপয় যুবক উত্তেজিত হয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে হাফিজের ওপর হামলা করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। 

বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে ওসি বলেন, তবে এখনও মারধরের শিকার হাফিজ চ্যালেঞ্জের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কাউকে আটক করেনি পুলিশ।