বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায় আমেরিকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে জানান মন্ত্রী।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 10:54 AM
Updated : 16 Feb 2023, 10:54 AM

সব ভুল বোঝাবুঝি দূর করে আমেরিকা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা খুব ভাগ্যবান যে, অনেক দেশের নামজাদা কূটনীতিকরা এসেছেন। আপনি (সাংবাদিক) আমেরিকার কথা বলছেন, আমেরিকার সাতজন অত্যন্ত সিনিয়র কূটনীতিক এসেছেন এবং আমাদের মধ্যে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে।

“ওরা এসেছেন আমাদের সঙ্গে তাদের দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার জন্য। যতো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি আছে, সব দূর করে অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির ওপর আমাদের উভয় দেশের, আমেরিকা এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক...।”

কোভিড ১৯-এর সময়কার সফলতার প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশকে ‘মিরাকল দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, “এই মিরাকল দেশের সঙ্গে তারা সুসম্পর্ক রাখতে চান। আর এখানে নতুন নতুন যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত হতে চান, সে জন্য এসেছেন। ”

অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ দূতও বলেছেন যে, বাংলাদেশ সবচেয়ে উন্নয়নশীল মানে র‌্যাপিডলি ডেভলপিং কান্ট্রি। আর এখানে বহু ধরনের সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোয় তারা যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, সেজন্য তিনিও এসেছেন।

“আর এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব, একই বার্তা নিয়ে- যে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার জন্য....সবাই এসে আমাদের প্রশংসা করেছেন আর আমাদের দেশে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন এবং আমরা খুব খুশি।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “গত কয়েক মাসে দেখেছেন, আমেরিকানরা কন্টিনিউয়াসলি একজনের পর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি আসছেন সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য। শুধু সেটা না, আমাদের দাওয়াতও দিয়েছেন তাদের দেশে গিয়ে তাদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য।

“সো উই আর ডেভলপিং ভেরি গুড রিলেশন্সশিপ এবং আই মাস্ট সে ইট ইজ সম্ভব হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার জন্যে। আর সুদূরপ্রসারী, এই যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে ফরেন পলিসি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়....আমরা কারো শত্রু নই। আমরা বাস্তববাদী ফরেন পলিসি চালু রেখেছি। ”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গারা সব ফেরত যাবে বলে মনে হয় না, বাস্তববাদী যদি হোন, তো তাদেরকে (বিদেশিদের) বলেছি, কিছু আপনারা নেন না কেন? তো তারা নেওয়া শুরু করেছেন।

“তারা আরও নেবেন, আমেরিকা নেবেন, কানাডা নেবেন....অন্যান্য দেশকেও আমরা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আমাদের এক নম্বর টার্গেট, আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক। আমেরিকানরা আমাদেরকে এই ব্যাপারে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন।”

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা সেবা নিশ্চিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “স্মার্ট কৃষিবিদ গড়ার মাধ্যমেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারব। কারণ কৃষিবিদরা সর্বক্ষেত্রে তাদের মেধার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।

দেশে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতির কৃতিত্ব কৃষিবিদদের মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে এবং কৃষিবিদদের কল্যাণে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হওয়ায় প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের খাদ্য আমদানি করতে হয় না। যার ফলশ্রুতিতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।”

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে জানান মন্ত্রী।

শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের কৃষিবিদ তৈরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগী হয়ে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় সিলেট অঞ্চলের অনাবাদি জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১, সেমিস্টার-১ এ ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের এই ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।

সহযোগি অধ্যাপক শামীমা নাসরীন ও সহকারী অধ্যাপক পার্থ প্রতীম বর্মণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান, রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক শরিফুন্নেছা মুনমুন, প্রক্টর অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।