যশোরে থানায় নষ্ট হচ্ছে শত শত মোটরযান

মালিকরা নিতে না আসায় ৫-১০ বছর ধরে থানা চত্বরে এগুলো পড়ে রয়েছে।

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 09:08 AM
Updated : 14 August 2022, 09:08 AM

যশোরের শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানা চত্বরে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনা, চোরাই, চোরাচালানী পণ্য ও মাদকদ্রব্য বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কাস্টমস এসব যানবাহন জব্দ করেছে।

মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে থাকা এসব আলামত হস্তান্তরে আইনের বাধা আছে। তাই আদালতের নির্দেশনা না পেলে তাদের কিছু করার নেই বলে জানান বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কামাল হোসেন ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, জব্দকৃত গাড়িগুলো বিভিন্ন মামলার আলামত। কাগজপত্র না থাকলে কিংবা আদালতে মামলা থাকলে নিষ্পত্তির জটিলতায় বেশিরভাগ মালিক যোগাযোগ করেন না। ফলে আদালতের নির্দেশনা না আসায় মালিককে ফেরত দেওয়া যায় না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল ও শার্শা থানার ভেতরে অসংখ্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, নছিমন পড়ে আছে। খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা এসব যানবাহন অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টিতে যন্ত্রাংশ মরিচা পড়ে বিকল হয়ে পড়ছে। ফলে অধিকাংশ যানবাহন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

শার্শা থানার এসআই সুমন সরকার বলেন, থানায় ১১৬টি মোটরসাইকেল ও ১৬টি প্রাইভেট কার আলামত হিসেবে আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোটরযান এই থানার হেফাজতে আছে।

পুলিশ বলছে, আদালতের রায় নিয়ে মালিকরা এসব যানবাহন ছাড়িয়ে নিতে না আসায় ৫-১০ বছর ধরে থানা চত্বরে এগুলো পড়ে রয়েছে। আর আদালতের নির্দেশনা ছাড়া এসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করাও যাবে না।

এ ছাড়া সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় থানায় পড়ে থাকা এসব গাড়িগুলোর অধিকাংশই মাদক কিংবা সোনা বহনকালে আটক হওয়ায় মালিকদের গাড়ি ছাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহ কম।

স্থানীয়দের ধারণা, দুই থানার চত্বরে পড়ে থাকা এসব মোটরযানের মূল্য কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তাই থানায় স্তুপাকারে ফেলে না রেখে একটি নির্দিষ্ট সময় পর গাড়িগুলোর নিলাম হলে একটি মোটা অংকের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে বলে মনে করেন সংবাদকর্মী মিলন কবীর।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, দুটি থানায় শত শত গাড়ি পড়ে রয়েছে। এসব গাড়ি বিক্রি করে দিলে থানার পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সরকার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যশোর জজ কোর্টের আইনজীবী আমিনুর রহমান হিরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন অপরাধে জব্দ করা যানবাহন সিজার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন এগুলো চলে যায় আদালতের জিম্মায়। মামলার আলামত হিসেবে পুলিশ এগুলো ছাড়তে পারে না। তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।”

নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জুয়েল ইমরান বলেন, “মোটরযান আইনে আটক বিভিন্ন মামলার আলামতগুলোই এই গাড়ি। এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে থাকি।”

“আদালতের মাধ্যমে সমন্বয় করে দ্রুত যদি মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ মামলার আলামতগুলোও নিষ্পত্তি করতে পারবে। মামলাগুলো দীর্ঘসূত্রিতার কারণে থানা পুলিশকে বেশি বেগ পেতে হয়।”