গোপালগঞ্জে পুকুর খুঁড়লেই মিলছে ‘মূর্তি’

“৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দুরা মূর্তি, সোনা ও রুপা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল। হয়তো সেগুলোর নিদর্শনই এখন পাওয়া যাচ্ছে।”

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2024, 02:26 PM
Updated : 23 March 2024, 02:26 PM

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় পুকুর খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন আকৃতির ‘দেব-দেবীর মূর্তি’।

উপজেলার ফুকরা ইউনিয়ন গুঘালিয়া গ্রামের পুকুর থেকে গত শুক্রবার থেকে স্থানীয়রা প্রতিদিন বালু খুঁড়ে এসব মূর্তি তুলছে।

মূর্তিগুলো দেখতে পুকুরপাড়ে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। এলাকাবাসী বলছে, এ রকম মূর্তি এর আগে দেখেননি তারা।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো রাশেদুজ্জামান জানান, শনিবার স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে তিনি ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে ফুকরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি অর্ধশতাধিক দেব-দেবীর মূর্তি ও অংশবিশেষ উদ্ধার করে এনেছেন।

গ্রামবাসী জানায়, পুকুরটির মালিক পাশের সরাইকান্দি গ্রামের বদরুল আলম শেখ।এক সপ্তাহ আগে সেখানে গোসল করতে নেমে বালুর মধ্যে ওই দেব-দেবীর মূর্তিগুলো পায় স্থানীয়রা। সে সময় তারা বালু খুঁড়ে আরও কিছু মূর্তি পেলে বাড়িতে নিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন বালু খুঁড়লেই মিলছে মূর্তি।

তাদের একজন গুঘালিয়া গ্রামের সাজ্জাদ শেখ। মূর্তি কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে বলেন, “গত এক সপ্তাহ আগে বদরুলের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে বালুর মধ্যে প্রথমে একটি মূর্তি দেখতে পাই। পরে বালু খুঁড়লে আরও কিছু মূর্তি রেরিয়ে আসে।

“সেগুলো বাড়িতে নিয়ে লোকজনকে দেখাই এবং স্থানীয় এক সাংবাদিককে বিষয়টি জানাই। পরে আমাদের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এসে সেগুলো নিয়ে যান।”

ফুকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ইশতিয়াক পটু বলেন, তার এলাকার একটি পুকুরে বালু খুঁড়ে ‘প্রাচীন আমলের’ মূর্তি পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন। তবে সেগুলো কীসের তৈরি সে বিষয়ে তার ধারণা নেই।

এদিকে মূতিগুলো স্বর্ণের তৈরি কী-না, কৌতুহলী কয়েকজন তা পরীক্ষা কারানোর জন্য কাশিয়ানীর রামদিয়া বাজারের সুরেশ স্বণর্কারের কাছে নিয়ে যান।

সুরেশ বলেন, “আমি নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড ঢেলে পরীক্ষা করে দেখেছি, যে মূর্তিগুলো ক্লিয়ার হয় কী-না।কিন্তু সেগুলো স্বর্ণ না।”

ফুকরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শংকর বাড়ৈ বলেন, “গুঘালিয়া গ্রামের একটি পুকুরে স্থানীয় কয়েকজন গোসল করতে গিয়ে বালু খুঁড়ে প্রাচীন আমলের মূর্তি পায়। বিষয়টি ইউএনও স্যার জানতে পেরে আমাকে পাঠায়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাই এবং মূর্তিগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসি।”

যে মূর্তিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো জেলা প্রশাসকের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে বলে ইউএনও রাশেদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

মূর্তিগুলো কীসের তৈরি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে বলতে পারবে, এগুলো কিসের তৈরি। তবে এসব মূর্তি ব্রোঞ্জের বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।”

ফুকরা মদনমোহন একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জইনউদ্দিন বলছেন, “ফুকরায় একসময় উচ্চ বর্ণের হিন্দু ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের বসবাস ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তাদের একটা অংশ চলে যায়। তারপর যারা ছিল, তারাও ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি, সোনা ও রুপা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল। হয়তো সেগুলোর নিদর্শনই এখন পাওয়া যাচ্ছে বলে ধারণা করছি।”