এনআইডি বদলে শ্বশুর-শাশুড়িকে করলেন বাবা-মা

মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের এই প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 06:23 PM
Updated : 28 Sept 2022, 06:23 PM

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় এক মুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধূ জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের বাবা-মার স্থলে শ্বশুর-শাশুড়ির নাম বসিয়েছেন।    

মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরের কোটা সুবিধা পেতে তিনি এই পন্থা নিয়েছেন বলে এলাকার লোকজন বললেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। 

উপজেলার তালবেরহাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক ও জমিলা বেগমের ছেলে আনিছুর রহমানের স্ত্রী এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।   

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামে। তার আট ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে আনিছুর রহমান। তিনি রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন। 

২০০৭ সালে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার নাগড়াকুরা গ্রামের প্রয়াত রবিউল ইসলাম ও আছমা বেগম দম্পতির মেয়ে সোনালী খাতুনকে বিয়ে করেন আনিছুর রহমান। তাদের তিনটি সন্তানও আছে। 

২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে মাদ্রাসায় ভর্তি হন আনিছুরের স্ত্রী সোনারী খাতুন। সেখানে তথ্য গোপন করে শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন। ওই মাদ্রাসা থেকে তিনি ২০১৩ সালে জিপিএ-২ দশমকি ৯৪ পেয়ে দাখিল পাস করেন।

 এ ছাড়া ১৯৯৪ সালের ২৫ মে জন্ম তারিখ দেখিয়ে সোনালী খাতুন দাখিলের সনদ, জন্মনিবন্ধন, শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর দম্পতিকে নিজের বাবা-মা দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও নেন। 

এ বিষয়ে প্রতিবেশী হযরত আলী ও বেলাল বলেন, এনআইডিতে থাকা ছবি সোনালী খাতুনের; তিনি আনিছুর রহমানের স্ত্রী। তাদের তিনটি সন্তানও আছে। 

প্রতিবেশী রাসেদ বলেন, “বিষয়টি আগে জানতাম না; আজই প্রথম দেখলাম। আনিছুর রহমান নিজের স্ত্রীকে কেন বোন বানিয়েছেন তা তো আমরা জানি না। তবে অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া এমনটি কেউ করতে পারে না।” 

সন্তোষপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, “আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। সে উলিপুর উপজেলায় বিয়ে করেছে। ভোটার আইডিতে সোনালী খাতুনের বাবা-মার জায়গায় আনিছুরের বাবা-মার নাম ব্যবহার করেছে, বিষয়টি আমি জানি।” 

ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য লিয়াকত আলী লাকু বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের আট ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। এই নামে তার পুত্রবধূ আছেন; যিনি আনিছুর রহমানের স্ত্রী।”                

আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক ভোটার আইডি দেখে নিশ্চিত করেন, সোনালী খাতুন তার ভাবি। 

তিনি বলেন, “ভাবি যখন ভোটার হয়েছিলেন তখন মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ-সুবিধা পেতে ভাই এমনটি করেছেন।” 

তবে সোনালী খাতুন মুক্তিযোদ্ধা কোটার কোনো সুবিধা পেয়েছেন কিনা কিংবা কোনো সুবিধার জন্য কোথাও আবেদন করেছেন কিনা তা তিনি বলতে পারেননি।

তবে আনিছুর রহমানের দাবি, ভুল করে তার স্ত্রী এমনটি করেছেন; ভোটার আইডি কার্ড ও শিক্ষাসনদ ঠিক করে নেবেন। 

এ বিষয়ে তার স্ত্রী সোনালী খাতুনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “সোনালী খাতুন ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করার সময় এসএসসি সনদ এবং জন্মনিবন্ধন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি।” 

এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।