পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠার পর তাকে সরে যেতে হয়েছিল।
Published : 25 Oct 2023, 09:56 AM
সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তহমিনা সিদ্দিকী জানিয়েছেন।
আবুল হোসেনের ভাগনে সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বুধবারই সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছিলেন তার মামা।
“বিকালে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গভীর রাতে উনি মারা যান।”
১৯৫১ সালে মাদারীপুরে ডাসারে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল হোসেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী খাজা নার্গিস, দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন এবং সৈয়দা ইফফাত হোসেনকে রেখে গেছেন।
রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন (কালকিনি-ডাসার-সদরের একাংশ) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি দায়িত্বে থাকার সময় ২০১১ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয়। পরে ওই প্রকল্পে অনিয়মের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক, যা নিয়ে মামলা হয় কানাডা ও বাংলাদেশে।
সমালোচনার মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় আবুল হোসেনকে। দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এলেও ঘরে-বাইরে চাপের মধ্যে ২০১২ সালে তাকে সরে যেতে হয়।
কিন্তু পরে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে রায় দেয় কানাডার একটি আদালত। বাংলাদেশেও দুদকের তদন্তে একই ফল আসে।
অনেক টানাপড়েনের পর বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু নির্মিত হয় নিজস্ব অর্থায়নে। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের আর রাজনীতিতে ফেরা হয়নি।
পুরো বিষয়টির জন্য বাংলাদেশের কিছু সংবাদপত্র ও ‘বিশিষ্ট’ ব্যক্তিকে দায়ী করে ২০১৭ সালে এক বিবৃতিতে আবুল হোসেন বলেছিলেন, “আমাকে হেনস্তা করে কী পেলেন”।
আবুল হোসেন সংসদ সদস্য থাকাকালে তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আবুল হোসেনের ভাগনে সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “উনার মরদেহ বর্তমানে সিএমএইচের হিমাগারে রাখা আছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর কখন দাফন করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”