ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।
Published : 14 Sep 2024, 09:55 AM
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে ‘মারধর ও হয়রানির’ কয়েকটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়ানোর পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ওই ঘটনায় জড়িত এক যুবককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) নামের ওই যুবককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।
ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, “সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
“শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে।”
ফারুকুল পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকায় থাকলেও তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।
এই ঘটনার আগে ফারুকুল তার ফেইসবুক আইডিতে গত বুধবার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ভিডিও দিয়েছিলেন।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি ফেইসবুকে তিনটি ভিডিও দিয়ে লেখেন, “কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোন নারীকে একা পেলে, কারো পোষাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান।”
ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণীর পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি।
এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক।
ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।
আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরও একজনকে দেখা যায়।
সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে তরুণীকে উঠবস কজরানো সেই যুবক।
এসময় ওই তরুণী যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, “উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব।”
এসব ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে আটক করা হয় বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ।
এদিকে ঘটনার সময় ওই যুবক নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করায় অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শুরু থেকে সক্রিয় থাকা স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা বলছেন, যুবকটি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নয়।
স্থানীয় সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, “আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশা, মত ও পথের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল; আটক যুবকেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তাই বলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।”
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কেউ যদি স্বউদ্যোগে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো কাজ করে থাকে সেটার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্মের জবাবদিহি ব্যক্তিকেই করতে হবে।”