পদ্মা সেতু: ফাঁকা ফেরি ঘাটের সুবিধা নিতে চায় ঝিনাইদহ

পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ‘২১ জেলার’ মানুষ সুফল পাবে বলা হলেও অন্তত ‘পাঁচটি জেলা’ এ নিয়ে সংশয়ে আছে; এর মধ্যে ঝিনাইদহের পরিবহন মালিকরা সেতুর পথে না গিয়ে ফেরিতেই পদ্মা নদী পার করে রাজধানীতে বাস পাঠাচ্ছেন।

বিমল সাহা ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 11:44 AM
Updated : 28 June 2022, 02:08 PM

রোববার থেকে সেতুতে যানবাহন চলাচলের পর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের খরায় ফেরিগুলোকে অপেক্ষা করতে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য। যেখানে আগে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো যাত্রীদের।

ফাঁকা ফেরি ঘাটের এই সুবিধা নিয়ে তিন দিন ধরে বাসগুলো এখন ঝিনাইদহ থেকে গাবতলী পৌঁছে যাচ্ছে কমবেশি পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই। আগে ২০০ কিলোমিটারের অধিক এই পথ পাড়ি দিতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লেগে যেত।

বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে অন্তত ছয় জেলার মানুষের ঢাকায় যাতায়াতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।

“পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-পথে যানবাহনের চাপ না থাকায় ফেরি ঘাটের ভোগান্তি কমে আসবে। হয়তো থাকবেই না। মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলার মানুষকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়েই ঢাকায় যাবে।”

ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে রাজধানীতে সরাসরি যোগাযোগের কোনো বাস নেই। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে ঢাকাগামী বাসগুলো ঝিনাইদহ থেকে যাত্রী তুলে। আবার ঢাকা থেকে আসার পথে ঝিনাইদহে নামিয়ে দিয়ে যায়।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, এই গাড়িগুলো ঝিনাইদহ থেকে বেরিয়ে মাগুরা-ফরিদপুর-ভাঙ্গা মোড় হয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে চলে যায়। ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে সাভার হয়ে গাবতলী পর্যন্ত যায়। বেসরকারি বাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া এখন সাড়ে ৫০০ টাকা।

তবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা থেকে ঢাকায় সরাসরি গাড়ি চলে। সেই গাড়িগুলো কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ-যমুনা বহুমুখী সেতু অতিক্রম করে। পরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে।

এদিকে দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারের বেশি। যদিও ভাড়া সাড়ে ৫০০ টাকাই।

পদ্মা সেতু চালুর পর শশব্যস্ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ এখন অনেকটাই ঝামেলাহীন; আগে যেখানে ফেরির জন্য গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হত, রোববার দেখা গেল ফেরি অপেক্ষায় ছিল গাড়ির জন্য।

আর ঝিনাইদহ-মাগুরা-ফরিদপুর-ভাঙ্গা মোড় হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকায় এলে রাস্তা কমবে বলেই জানালেন পরিবহন মালিকরা। তবে কতোটা কমবে তা এখনও তারা জানেন না।

ঝিনাইদহের রয়াল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আব্দুল হান্নান শিল্টু বলেন, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার প্রায় দেড়শ বাস ঢাকার পথে চলাচল করে। বাসগুলো আগের রুটে চলাচল করছে। অর্থাৎ ফেরি দিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে।

“কারণ, এখান থেকে যেসব যাত্রী ঢাকাতে যান তাদের বেশিরভাগই নবীনগর, সাভার, মিরপুর ও শ্যামলী এলাকার। সে কারণে এ পথ তাদের সুবিধাজনক।”

তাছাড়া পদ্মা সেতু হয়ে সায়েদাবাদ যেতে হলে নতুন রুট পারমিট নিতে হবে বলেও জানান রয়াল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার। তিনি আরও বলেন, যেসব যাত্রী ঝিনাইদহ থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর যাবেন তাদের জন্য পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়া ভাল হবে। কারণ, তাহলে তাদেরকে গাবতলী থেকে সায়দাবাদ পাড়ি দেওয়ার মতো ভোগান্তি পোহাতে হবে না। 

পরিবহন মালিকরা সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান শিল্টু।

শৈলকুপা থেকে ঢাকায় ২০ থেকে ২৫টি বাস যাতায়াত করে। সেখানে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে।

কাউন্টার ইনচার্জ হিল্লোল মীর বলেন, “আমাদের গাড়ি আগের মতোই যমুনা সেতু হয়ে যাতায়াত করছে। এরপর কোন রুটে চলবে তা মালিকরা নির্ধারণ করবেন।”

বেলাল হোসেন নামের ঝিনাইদহের এক যাত্রী বলেন, যারা সায়েদাবাদ টার্মিনালে যাবেন তারা পদ্মা সেতু হয়ে যাবেন। আর যারা মিরপুর, গাবতলী যাবেন তারা দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়ে যাবেন।

তবে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং পদ্মা সেতু দুই পথই ব্যবহার করছে বলে জানান জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটন।

তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম-সিলেট-কুমিল্লাগামী ট্রাক পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করবে। আবার ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুরগামী ট্রাক দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পারাপার হয়ে চলছে।”

ফোটন আরও বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ অনেক কমে গেছে।