সিলেটের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় অনাহারে বানভাসিরা

সিলেটের আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসিরা দিনে এক বেলাও নিয়মিত খাবার পাচ্ছেন না; শিশুসহ সবাই পড়েছেন চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে; কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে তাদের অসামর্থ্যের কথা।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2022, 04:06 PM
Updated : 21 June 2022, 04:06 PM

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বেশির ভাগ এলাকায় বন্যা-পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে; প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

বাড়িঘর বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় এসব বানভাসি উঠছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু সেখানে তারা খাবার জোগাড় করতে পারছেন না।

সদর উপজেলার মির্জা জাঙ্গাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের আলীম উদ্দিন বলেন, ছয় দিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে এই কেন্দ্রে আছেন। আশপাশের লোকজন রান্না করা খাবার কখনও দিচ্ছেন, কখনও দিচ্ছেন না।

“দিনে গড়ে এক বেলাও খাবার পাচ্ছি না।”

কিশোরীমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আছেন আছমা আক্তারসহ অনেকে।

আছমা বলেন, তাদের ঘরে এখন কোমরপানি। তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে এই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন অন্য অনেকের সঙ্গে।

”কিন্তু ন্যূনতম খাবারও অনিশ্চিত। কখনও মিলছে কখনও মিলছে না। শিশুদের নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই।”

বাসা পানি ওঠায় সিলেট শহরে ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে সরকারি বরাদ্দ নামমাত্র।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজার বন্যার্ত উঠেছেন। প্রত্যেকের জন্য এ পর্যন্ত বরাদ্দ মাত্র এক কেজি চিঁড়া ও আড়াইশ গ্রাম গুড়। এর বাইরে কাউন্সিলর ও স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাবার দিচ্ছেন।

বন্যায় শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি। তাদের জন্য মাত্র ৩০ টন চাল সরকার বরাদ্দ দিয়েছে বলে মেয়র আরিফুল হকের এক বক্তব্যে এসেছে।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে বন্যা পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউসে মতবিনিময় করেন। সেখানে মেয়র আরিফুল বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।

এদিকে বন্যা-পরিস্থিতির উন্নতির আভাস পাওয়া যায়নি সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, মঙ্গলবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এলাকায়। আগের দিন থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে সিলেট সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায়। আর পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়।

কুশিয়ারা নদীর পানি সন্ধ্যা ৬টায় সব পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধির ফলে বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার, মুড়িয়া, লাউতা, শেওলা, মাথিউরা, মোল্লাপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বালাগঞ্জ উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির ফলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত এলাকায়ও পানি বেড়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর এলাকায় সিলেট-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়ক তলিয়ে গেছে।

ওসমানীনগর উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী সাদিপুর, গোয়ালাবাজার ও পৈলনপুর ইউনিয়নে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার বাকি এলাকাগুলোয় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা তীরবর্তী ছয় ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ও সুরমা-তীরবর্তী তিন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সুরমা-তীরবর্তী কুচাই, বরইকান্দি ও মোল্লারগাঁও ইউনিয়নে উন্নতি হলেও ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে কুশিয়ারার পানি ঢুকে মোগলাবাজার, দাউদপুর, জালালপুর ও সিলাম ইউনিয়নে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

বন্যায় সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, এ পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগে ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে সিলেটে ১৪ জন, মৌলভীবাজারে তিনজন ও সুনামগঞ্জে পাঁচজন রয়েছেন।

জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ ও গবাদিপশু পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বন্যার্তদের সহযোগিতা ও উদ্ধারে কাজ করছেন। কিন্তু এখনও তারা দুর্গম অনেক এলাকায় পৌঁছাতে পারেননি।