ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা সিলেটবাসী

বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার পেয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরীসহ পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। আড়াইশ বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2022, 07:39 AM
Updated : 17 June 2022, 09:20 AM

শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও পানিবন্দি। পানি বাড়ছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়। নগরীর অনেক এলাকা এখন পানির নিচে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। পানির উচ্চতা বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানিয়েছেন।

সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- সিলেটে এ বছর ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন পরীক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ১৪৯ পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্টিত হবে।

সিলেট জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “এ পর্যন্ত জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।”

এছাড়া জেলার ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ওয়াদুদ।

বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রেও। এই উপকেন্দ্র দিয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ইতোমধ্যে সিলেটের পুরো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়ইঘাট উপজেলা এবং নগরীর উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরঞ্জিত সিংহ বলেন, “কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করেছে। যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগবে না। যদি কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করে তাহলে এই গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। এই গ্রিড বন্ধ করলে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।”

নগরীর ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, শামীমাবাদ, ডহর, তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, হবিনন্দি, সাদিপুর, বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম পলাশ জানান, বুধবার দুপুরেই উপশহরের বেশির ভাগ সড়ক তলিয়ে যায়। রাতের দিকে বাসায় পানি ঢুকে পড়ে। পানি বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, সঙ্গে পানির সঙ্কটও দেখা দিয়েছে।

নগরের শেখঘাট এলাকার রশিদ আহমদ বলেন, “এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বাবের মতো  বাসায় পানি ঢুকেছে। আমরা গরিব মানুষ। বারবার এভাবে ঘরে পানি ঢুকে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করতে হয়।”

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রনিখাইল এলাকার ইসমাইল আলী বলেন, “বারবার বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছি। সব হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। পরিবার নিয়ে কোথায় যাব।”

এদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট মহানগরীতে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখনও অনেকেই নিজেদের আসবাবপত্র রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না। তবে বন্যাকবলিত সবাইকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।”