ব্রহ্মপুত্রের চরে ঘাট নির্মাণ সমালোচনার মুখে

ব্রহ্মপুত্র নদের চরে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কংক্রিটের ঘাট তৈরির সমালোচনা করছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2022, 05:03 PM
Updated : 25 May 2022, 05:03 PM

এই ঘাট নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর গত সোমবার স্মারকলিপি দিয়েছে ‘জন-উদ্যোগ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই স্মারকলিপিতে তারা নদীর চরে স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশ ও আইন বিরোধী বলে দাবি করেন। 

নির্মাণাধীন এই ঘাটের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৩০ ফুট।

‘ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নগরীর কাচারিঘাট ও বালুর ঘাট এলাকায় এই ঘাট নির্মাণ কাজ করছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম বলেন, “যতটুকু কাজ করা হয়েছে, এতটুকুই আমাদের কাজ শেষ। এখানে শুধু প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ঘাট নির্মাণ করা হবে। আর কোনো মাটি ফেলা বা ভরাট করা হবে না।”

জেলা জন-উদ্যোগের আহব্বায়ক নজরুল চুন্নু বলেন, হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এক রিটের রায়ে তুরাগসহ দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছে। নদ-নদী দেখাশোনা করা, দূষণ ও দখলমুক্ত রাখতে জাতীয় নদী কমিশনকে দায়িত্ব দেয়। নদী কমিশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন।

শহর রক্ষা বাঁধ থেকে প্রায় ১৫০ মিটার ভিতরে মূল নদীর কাছে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে নদের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। নদের মাঝখানে কোনোমতেই ঘাট নির্মাণ করা যাবে না। এই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থি।

“নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। যতটুকু নির্মাণ করা হয়েছে তা অপসারণ করে ওই স্থানটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সরাসরি বলতে চাই, এটা দখল প্রক্রিয়া। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে নানা অজুহাতে নদ দখল চলতেই থাকবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, নদের সীমানা নির্ধারণ করে ভিতরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক। নদ-নদী বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।”

ময়মনসিংহ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, “নদের চরে ঘাট তৈরির বিষয়টি শুনেছি। জেলা জন-জনউদ্যোগ ওই নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এসব কাজ করার বিষয়ে আদালতের রিট আছে ও সরকারের পক্ষ থেকেও নিষেধাজ্ঞা আছে যাতে নদী কারোর দখলে না যায়।”

তিনি বলেন, এ ধরনের কাজগুলোর ক্ষেত্রে কাজ শুরু হওয়ার আগে বিষয়টি সাধারণ জনগণকে জানানো উচিৎ। কী কারণে নদীর ভিতরে নির্মাণ কাজ চলছে। যদি নির্মাণ কাজ স্থায়ী ও বড় ধরনের হয়, তাহলে নদী বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘাট নির্মাণ করার বিষয়টি জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রতি বছরই এখান দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের সময় জায়গাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এতে অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়। যে কারণে এই ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে ঘাট সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শিব্বির আহম্মেদ লিটন বলেন, “নদের মাঝখান দিয়ে হঠাৎ করে দেয়াল তোলা হচ্ছে, বিষয়টি দুঃখজনক। এই কাজটি যে বা যারাই করুক না কেন জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন দ্রুত – এটাই আশা করছি।” 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, “নদের চরে ঘাট করার বিষয়ে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। আমিও অবগত রয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”