একই সঙ্গে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে বনবিভাগ ও থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণ ব্যাখ্যা করতেও বলা হয়েছে।
সোমবার মৌলভীবাজার মুখ্য বিচারিক হাকিম এবং ‘জাস্টিস অব্ দি পিস, মৌলভীবাজার’ মুহম্মদ আলী আহসান এ আদেশ দেন; যা এই হাকিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
একটি জাতীয় দৈনিকে হাতির শাবককে নির্যাতনের সংবাদ এবং ইউটিউবে ভিডিও এই আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে পাহাড়ের গহীনে হাতির মালিকরা হাতি শাবক পোষ মানানোর এমন নির্যাতন চালানো হয় বলে ওই সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আদেশে বলা হয়, চার বছরের হাতি শাবককে বশে আনতে পেটানো হয় ইচ্ছে মত, কখনও কখনও লোহা দিয়ে তৈরি ‘কুকু’ ব্যবহার করা হয় নির্যাতনের কাজে। চার-পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাকে ব্যবসার কাজে নামানোর জন্য অমানবিকভাবে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে এ প্রশিক্ষণকে বলা হয় ‘হাদানি’।
এ সময় বাচ্চা হাতিটিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে বেঁধে রাখা হয়। দুই থেকে তিন মাসব্যাপী চলা এ প্রশিক্ষণের সময় নানা কলাকৌশল শেখাতে মূল অস্ত্রই হলো ‘নির্মম’ শারীরিক নির্যাতন। এই সময় হাতিটি শৃঙ্খলমুক্ত হতে জোরাজুরি করে, যন্ত্রণায় শূঁড় উপরে তুলে কাতরায়। ফাঁকে ফাঁকে খড়ের সঙ্গে মিষ্টান্ন মিশিয়ে হাতিটিকে খাওয়ানো হয়। এরপর রশি দিয়ে টেনে টেনে বিভিন্ন স্থান ঘোড়ানো হয়। এরপর আবার বেঁধে রাখা হয় শাবকটিকে।
এই নির্যাতনের প্রক্রিয়ায় শাবকটি মাটিতে লুটিয়েও পড়ে। এরকম নির্মম নির্যাতনের পর মানুষের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করা হয় শাবককে।
অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো হাতি সুরক্ষার জন্য দেশে প্রচলিত আইন থাকলেও এমন বেআইনি ও প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতিকে পোষ মানানো হয় এবং প্রায় সময় নিষ্ঠুর নির্যাতনের ফলে হাতি শাবক মারাও যায়।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা প্রচারিত হওয়ার পর এই আদালত স্বতঃপ্রণিাদিত হয়ে এ আদেশ দেয়।
আদেশে সরেজমিনে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী ও মৌলভীবাজার জুড়ী থানাও ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে উভয় তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের প্রতিবেদনে হাতি নির্যাতনের উক্ত ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণের নামে নির্দয় নির্যাতনে কয়টি হাতি মারা গেছে তার সংখ্যা, হাতি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে (তন্মধ্যে কয়টি পালিত ও কয়টি বন থেকে সংগৃহীত), মৌলভীবাজার জেলায় হাতি লালনপালন ও প্রশিক্ষণে কয়জনকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে এবং হাতির প্রতি উক্ত নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্য আইনানুযায়ী কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে অন্যান্য বিষয়ের সাথে অবশ্যই উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।
এছাড়া বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এবং প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী হাতির প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন নিরসনে জুড়ী থানার ওসি, মৌলভীবাজার এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা বেআইনি গণ্যে কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলের জন্য ধার্য করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জুড়ি থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, এখনও নির্দেশনার কাজ হাতে পাননি। কাগজ হাতে পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন।