৯ জেব্রার মৃত্যু ‘ব্যাক্টেরিয়ায় ও মারামারিতে’

প্রাণঘাতী ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ ও নিজেদের মধ্যে মারামারি করে গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নয়টি জেব্রা মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকগাজীপুর প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2022, 01:06 PM
Updated : 25 Jan 2022, 03:23 PM

২২ দিনের ব্যবধানে নয়টি জেব্রার মৃত্যুর কারণ খুঁজে দেখতে নমুনা পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞদলের দিনব্যাপী পর্যালোচনার পর মঙ্গলবার বিকেলে পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ঐরাবত বিশ্রামাগারে পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, “নয়টি জেব্রার মৃত্যুর কারণ উদঘাটিত হয়েছে। সব প্রতিবেদন ও সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞদল জানিয়েছেন, পাঁচ ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি জেব্রার এবং চারটি নিজেদের মধ্যে মারামরি করে মারা গেছে।”

এর আগে সকালে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “গত ২ জানুয়ারি থেকে পার্কের আফ্রিকান কোর সাফারির জেব্রা বেষ্টনীতে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নয়টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে।”

জেব্রার মৃতদেহের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সোমবার রাতে সবগুলো ফলাফলও হাতে পায় কর্তৃপক্ষ।

ফলাফল হাতে নিয়েই মঙ্গলবার সকালে সাফারি পার্কে বিশেষজ্ঞদল বৈঠকে বসেন।

পার্কের কার্যালয়ের সভাকক্ষে ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞদলের মধ্যে ছিলেন- ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান, সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকার কেন্দ্রীয় পশু হাপসপাতালের সাবেক প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ও ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ডা. এ বি এম শহীদ উল্লাহ, গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম উকিল উদ্দিন ও সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন।

বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনের পাশাপাশি পার্কের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষাৎ নেন এবং জেব্রার আবাসস্থল ও ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।

পরে বৈঠক শেষে বিকেলে প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির ও বিশেষজ্ঞদলের সদস্য মো. শহীদুল্লাহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস গ্রহণ ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, কস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামক ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরও চারটি জেব্রা মারা গেছে।

জেব্রার জীবনরক্ষায় পার্কের পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাত ধরনের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এর মধ্যে রয়েছে- জেব্রার আবাসনস্থলের জায়গা পরিবর্তন, মাটি উলট-পালট করে দেওয়া, নালার পানি পরিবর্তন করা, সব জেব্রাকে টিকার আওতায় আনা।

এ ছাড়া জেব্রাদের জন্য উন্নত ঘাসের (ফুল আসার আগে) ব্যবস্থা করতে হবে। ফাঙ্গাসমুক্ত খাবার পরিবেশন করতে হবে। প্রাণির অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে এবং পার্কের ভেতরে ঘাস উৎপাদন করে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বশেষ পার্কে ৩১টি জেব্রা ছিল। নয়টি জেব্রা মৃত্যুর পর এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২টিতে। এর আগে অল্প সময়ে এ পার্কে এতোগুলো প্রাণী আর কখনও মারা যায়নি বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত কমিটি হবে: পরিবেশ মন্ত্রী

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ২২ দিনে নয় জেব্রার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

ময়নাতদন্তের মাধ্যমে এসব জেব্রার মৃত্যুর সঠিক কারণ এবং এতে কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না তা খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। 

মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘২০২১-২২ অর্থ বছরের এডিপিভুক্ত প্রকল্পসমূহের ওপর ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা’ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মন্ত্রী একথা জানান।

পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, “এত কম সময়ের ব্যবধানে ৯টি জেব্রার মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। …প্রাথমিক কিছু তথ্য জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা ফলাফল বিশ্লেষণ করছেন। যথাযথ কারণ নির্ণয়ে আরও সময়ের প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে নমুনা বিদেশে পাঠানো হতে পারে।”